৩ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৩:০১

বিপর্যয়ের শঙ্কায় আর্থিকখাত

 

আর মাত্র ৪ দিন পর ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচবছর পরপর নির্বাচনের আগে অর্থনীতিতে নানা সঙ্কট দেখা দেয়। ডলার পাচার থেকে শুরু করে হরতাল-অবরোধ কিংবা আন্দোলন কর্মসূচিতে ব্যবসায়িক ক্ষতি এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়। অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ-এমন কিছু সিদ্ধান্তও আটকে থাকে নির্বাচন শেষ হবার অপেক্ষায়। নির্বাচনের পর নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সবকিছু স্বাভাবিক হবে এটাই ধরে নেয়া হয়। তবে এবার চিরাচরিত নিয়মের অর্থনৈতিক সঙ্কট শুধু নির্বাচনের আগেই নয়; নির্বাচনের পরও বহাল থাকছে। কারণ সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ আরো কিছু দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। একই সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা চাচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনকে তারা অংশগ্রহণমূলক মনে করছে না। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার ক্ষুন্ন করার ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচনের পর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের মনোভাবের কারণে তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষ করে রফতানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাকখাতে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া আর্থিকখাতের সূচকগুলোও নিম্নমুখী। দাতা সংস্থা ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ (বিপিসি) অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে নতুন করে এসব পণ্যের জোগান কমে গেছে। এসব কারণে শিল্পের উৎপাদন এমনিতেই নিম্নমুখী। চলতি বছরে এ খাতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জ্বালানীসহ অনেক পণ্যের আমদানি বকেয়া বিল পরিশোদের চাপ আছে সামনে। সর্বোপরি বিদায়ী বছর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালন করতে পারেনি বাংলাদেশ। দেশের মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও আইএমএফ’র ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি আরও কঠোর করতে হবে। সুদের হার আরও বাড়াতে হবে। ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির দাম আরও বাড়ানোর চাপ থাকবে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে ডলারের দাম বাড়বে। ফলে শিল্পের খরচ বাড়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এসব মিলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি তথা সাধারণ মানুষের উপর। এদিকে দেশে প্রায় দুই বছর ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। বর্তমানে ডলারের সে সঙ্কট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটার টান। এমনকি বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রফতানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কোনো উৎস থেকেই ডলার আসার সুখবর নেই। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দ্বিমুখী পরিস্থিতি রিজার্ভ সঙ্কটের চাপকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। আর তাই আর্থিকথাতে সঙ্কট বাড়ছে। সদ্য বিদায়ী বছর শেষে আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে সেই নথিপত্র অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নির্বাচনের পরের অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সতর্ক করে আসছে দেশের অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ। তারা বলছেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে একটি বৈরি পরিস্থিতি চলছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ আছে। কিন্তু তার মধ্যেও দেশ একপাক্ষিক নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে সরকারের অর্থনীতির দিকে নজর দেয়ার দরকার। আর তাই নির্বাচনের পরে নতুন বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবার বাংলাদেশকে ভূ-অর্থনৈতিক চাপে পড়তে হবে। ইতোমধ্যেই এ চাপ আসা শুরু করেছে। আগামী দিনে এ চাপ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও বাড়তে পারে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণেই এ ধরনের চাপ বাড়বে। এ চাপ মোকাবিলা করাই হবে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এতে সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে রফতানিতে। রফতানির প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে বাড়তে পারে অস্থিরতা। ফলে রিজার্ভে চাপ আরও বাড়বে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা থাকবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাটাই হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ‘নির্বাচনের নৈতিক মানদণ্ডে দুর্বল’ একটি সরকারের পক্ষে তা সহজ হবে না। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখন যেহেতু আর বিশেষ কোন নীতি সংস্কার হবে না, তাই নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য, মুদ্রা বিনিময় হার ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে ব্যাংক বা কোন খাতে যেন কাঠামোগত সঙ্কট না হয়। আবার বৈদেশিক দায় দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোন সমস্যা তৈরি না হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের ওপর রাখতে। সেটা সম্ভব হয়েছে। নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়নের ওপরেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলেছে সেটা সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা। রিজার্ভ এর কম বা বেশি হতেই পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এ প্রথমবার ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

বছরজুড়েই বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকায় বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এতে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ভাঙ্গার পাশাপাশি কমছে ব্যাংকে আমানত জমার প্রবণতাও। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই জীবিকানির্বাহের তাগিদে তাঁদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মতোই গত তিন মাসে পোশাককর্মীরা ব্যাংকে থাকা তাঁদের আমানত থেকে ৩০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাঁদের ব্যাংক হিসাবে মাসে যে পরিমাণ টাকা জমা রাখতেন, সেটা রাখছেন না। আর নতুন আমানত কম আসায় ব্যাংকে বাড়ছে তারল্য-সঙ্কট। তাই প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। বেশীরভাগ ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলছে।

কথা হয় আমদানিকারক শংকর ঘোষের সঙ্গে। তিনি বিদেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করেন। চাল, ডালসহ বিভিন্ন রকম মসলা আইটেম আছে তার আমদানি তালিকায়। কিন্তু এলসি সঙ্কটে চাহিদামতো আমদানি করতে পারছেন না তিনি। নির্বাচন কেন্দ্রীক পরিস্থিতি আরো খারাপ দেখছেন। শংকর ঘোষ বলেন, একটা সময় ব্যাংক আমাদের কাছে এলসি খোলার জন্য বসে থাকতো, এখন আমরা সারাক্ষণ ব্যাংকের পেছনে ঘুরেও এলসি পাচ্ছি না। আমার দরকার একলাখ ডলার। পাচ্ছি বিশ হাজার কিংবা পঁচিশ হাজার ডলার। এছাড়া বিদেশে যে সাপ্লায়ার আছে তাকেও অনেক সময় ব্যাংক যথাসময়ে পেমেন্ট দিতে পারছে না। এজন্য বিদেশি সাপ্লাইয়াররাও অনাগ্রহ প্রকাশ করছে পণ্য পাঠাতে। প্রায় ২৫ বছর ধরে আমদানি ব্যবসায় নিয়োজিত শংকর ঘোষ জানান, নির্বাচনী বছরে প্রায় সময়ই রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির থাকায় তার ব্যবসাও খারাপ যায়। তিনি বলেন, যখনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, হরতাল-অবরোধ হয়, তখনি তাদের সমস্যায় পড়েন। আমদানি করে যাদের কাছে মাল পাঠাবো, দেখা যায় তাদের দিতে পারি না। কারণ, পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে যায়। মানে ওভারঅল দেশের কোন একটা সমস্যা হলে সেটা সবার উপরে গিয়েই পড়ে। তিনি যখন তার আমদানি ব্যবসার এমন চিত্র তুলে ধরছেন তখন সুখবর নেই রফতানিতেও। বিশেষত: রফতানির মূল খাত তৈরি পোশাকেও। চলতি অর্থবছরের প্রথম কয়েকমাসে তৈরি পোশাক রফতানি আশাব্যঞ্জক না হলেও সেটা ইতিবাচক ধারায় ছিলো। কিন্তু নির্বাচনের আগে অক্টোবর এবং নভেম্বরে রফতানি গত অর্থবছরের একইসময়ের তুলনায় না বেড়ে উল্টো কমেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো হিসাব দিচ্ছে, অক্টোবরে তৈরি পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। আর নভেম্বরে সেটা কমেছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। রফতানির এমন অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রম অধিকার, জিএসপি কিংবা রফতানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা আশঙ্কা। যার মূল কারণ আবার লুকিয়ে আছে দেশের রাজনীতিতে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা অ্যাপারেলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলছেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। শুধু ইলেকশন না, তার সঙ্গে রাজনীতিকে ঘিরেও বিদেশিদের একটা চাপ খেয়াল করছি। এই চাপগুলো আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বৃহত্তম বাজার হচ্ছে আমেরিকা। বছরে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে। অথচ চলতি ২০২৩ সালে দেশটিতে পোশাক রফতানিতে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। বছরের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমেছে ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আগে রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষে ছিল। এখন নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। রেমিট্যান্স কমেছে ৪১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোয়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে রফতানি কমেছে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে। বিনিয়োগ কমেছে বৈশ্বিক মন্দায়। বাংলাদেশের আমদানি কমেছে ডলার সঙ্কটের কারণে। অবশ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়; বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশই কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ দুটি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। রফতানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসব দেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমদানির ৭২ শতাংশই আসছে ভারত ও চীন থেকে। রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসছে ওইসব অঞ্চল থেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগই আসছে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে। আর এগুলো খরচ হচ্ছে বেশি চীন ও ভারতে। আয় হলে খরচ করা যাবে। আয় না হলে খরচ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোতে হবে।

এদিকে নতুন বছরে আইএমএফ’র ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন একটি নতুন খড়গ হিসাবে দেখা দেবে। কারণ, আগের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও শর্ত শিথিল করে সংস্থাটি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করেছে। তৃতীয় কিস্তি জুনে এবং চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বরে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ঋণের কঠিন কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির মাধ্যমে টাকার প্রবাহে আরও রাশ টেনে ধরা, সুদের হার আরও বাড়ানো, ডলারের বিনিময় হার পুরো মাত্রায় বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং রাজস্ব আয় বাড়ানো। এসব পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, অর্থনীতিতে এখন দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। একটি হলো চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানো, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ- এগুলোয় নিয়ন্ত্রণ আনা কঠিন হবে। কারণ, রেমিট্যান্স ও রফতানি বাড়ানো সহজ হবে না। এটি না বাড়লে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভে হাত দিতে হবে। তখন রিজার্ভ কমে যাবে। ডলারের দামও বাড়বে। মূল্যস্ফীতির হার উসকে যাবে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। দেশের বিদ্যমান সঙ্কটের মধ্যে আর কোনোভাবেই ডলারের দাম বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। ডলারের কারণেই অর্থনীতির সব খাত আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যদি ভূরাজনৈতিক কারণে কোনো বিধিনিষেধ চলে আসে, তাহলে বড় সমস্যা হবে। ওই ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

https://dailyinqilab.com/national/article/628580