৩ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ২:৪৯

৯ ডিগ্রীতে নেমেছে তাপমাত্রা ॥ শীতে কাবু নিম্ন আয়ের মানুষ  

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ফের ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। গতকাল  মঙ্গলবার সকালে দেশে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এখন পর্যন্ত এটিই চলতি শীত মৌসুমের সবচেয়ে কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার দেশের দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয় বিভাগে তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে, একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগে তাপমাত্রা বেড়ে শীত কমতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এসময়ে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সীতাকু-ে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবারও কুয়াশা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন,

বুধবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহস্পতিবার সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। 

পরবর্তী পাঁচদিনে রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।  এদিকে  গত ৩ দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। সেইসাথে উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ জেলার দরিদ্র মানুষজন। মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার কারণে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি এই জেলায়। মঙ্গলবার নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষজন বাইরে বের হতে না পেরে পড়েছেন দুর্ভোগে। বিশেষ করে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা গ্রাম ও চরের মানুষজন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, মঙ্গলবার নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এটাই নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস 

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : উত্তরের জেলা নীলফামারী সৈয়দপুরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে শীতের প্রকোপ। গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত আচ্ছন্ন থাকছে। এতে করে দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাত ভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে টপটপ করে পড়ছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার  কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের।  দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ  প্রতিবেদকে তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ও ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুরে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরের উপর দিয়ে মৃদুু শৈত্যপ্রভাব বয়ে যাচ্ছে। সৈয়দপুরে আজ এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা সারা দেশেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকতে পারে। এদিকে দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাস্তায় কমেছে মানুষের চলাচল। উষ্ণতার আশায় কেউবা আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এমন আবহাওয়ার কারণে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষ কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। আজ সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে টপটপ করে পড়ছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধানে।

শহরের বাসটার্মিনাল এলাকায় কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক জবেদ  আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডায় মানুষজন বের হচ্ছে কম। কামাই নাই, আমাদের প্রতিদিন রোজগার করে খেতে হয়। একদিন কামাই না করলে বউ-বাচ্চা নিয়া না খেয়ে থাকতে হবে। ঠান্ডায় মানুষ রিকশায় উঠতেও চায় না।’

রামনগর এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই শীতের কারণে কোনোকিছু করা যাচ্ছে না। কোনো প্রকার কাজকামও নাই। কীভাবে যে সংসার চালাবো বুঝতে পারতেছি না।’ এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ২৫ হাজার পিস কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৫ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।

নীলফামারীতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস 

নীলফামারী সংবাদদাতা : গত ৩ দিন ধরে শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। সেই সাথে উত্তরের হিমেল বাতাশ আর ঘন কুয়াশার কারণে চরম  দুর্ভোগে পড়েছে এ জেলার দরিদ্র মানুষজন। মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার কারণে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি এই জেলায়। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষজন বাহিরে বের হতে না পেরে পড়েছেন দুর্ভোগে। বিশেষ করে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা গ্রাম ও চরের মানুষজন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান মঙ্গলবার সকাল ৬টায় নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এটাই নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

গাইবান্ধায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

গাইবান্ধা সংবাদদাতা : চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিযাস রেকর্ড করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান  এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই গাইবান্ধার তাপমাত্রা কমে আসছে। চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা আগামীতে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা আগেও জেলার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগ নিয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা আসতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর ও অ্যাজমায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড অপরদিকে হিমেল হাওয়া ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকরা। গবাদিপশুগুলোকে পুরনো কাঁথা-কম্বল, বস্তা দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় রয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের গবাদিপশুগুলো। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তালুক বেলকা গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান সরকার রয়েল বলেন, কয়েকদিন তেমন শীত ছিল না। গতকাল থেকে আবার হিমেল হাওয়া আর শীত শুরু হয়েছে। পৌষের মাঝামাঝি সময়ে হাড় কাঁপানো ঠা-াতে কাহিল জনজীবন।

তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দা গ্রামের আব্দুর রহিম ম-ল বলেন, শীতে অবস্থা খুব কাহিল। এরকম ঠাণ্ডা ও শীত হলে আমার মতো বয়স্ক মানুষগুলোর খুব সমস্যা। এমনিতেই অসুখে চলতে পারি না।

হরিপুর ইউনিয়নের চরিতাবাড়ী গ্রামের আমজাদ হোসেন  বলেন, তিনদিন থেকে খুব ঠান্ডা ও কুয়াশা। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমাদের চরে তো সবসময় বাতাস থাকে তাই খুব ঠান্ডা। বাড়ি থেকে বাহির হওয়া যাচ্ছে না। গতকালও সারাদিন কুয়াশায় ঢাকা ছিল আমাদের এলাকা। আজও কুয়াশা আরও বেশি।

https://www.dailysangram.info/post/545041