২ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩৫

ফিরে দেখা ২০২৩

মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ

 

চলতি আর্থিক বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ১৫০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু থামানো যায়নি। বরং গত বছর প্রায় মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছে যায় ডেঙ্গু। গত এক বছরই দেশের তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এক হাজার ৭০৫ জন মানুষ।
রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মশা নিয়ন্ত্রণে ১১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বাজেট করেছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বাজেট করেছে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২০২৩) দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করেছে ৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

 

এর মধ্যে ডিএনসিসি ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ডিএসসিসি ব্যয় করেছে ৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা। কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী। বরং এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষকে হাসপাতালের বিছানায় ভুগতে হয়েছে মৃত্যু যন্ত্রণায়। এ যন্ত্র থেকে মুক্তি পায়নি শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই। অনেকে চিকিৎসায় ভালো হয়ে উঠলেও ব্যয় করতে হয়েছে হাজার হাজার টাকা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ২৪ বছরের ডেঙ্গুর ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে গত বছর। ২০২৩ সালের পুরোটা জুড়েই দেশবাসীকে ভুগিয়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় আর মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের।

অধিদফতরের তথ্যানুসারে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৮৬৮ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। আর শুধু ২০২৩ সালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক হাজার ৭০৫ জন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, তেইশ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর পাঁচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। এর পরে কয়েক বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কম থাকলেও গত পাঁচ বছর ধরে ভোগাচ্ছে ডেঙ্গু। ২০২০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও মারা যায় সাতজন। এ ছাড়া ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

একসময়ের ঢাকাকেন্দ্রিক ডেঙ্গু থাকলে গত বছর ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। ঢাকার তুলনায় বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল দ্বিগুণের বেশি। তবে সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। এজন্যই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা ওঠে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ডেঙ্গু এখন সারা বছরের সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সারা বছর ধরে নিয়মিত কর্মসূচি নিতে হবে সিটি করপোরেশনসহ সব দফতরকে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/803112