২ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩২

শুধু অবহেলায় ১৭০৫ জন মানুষের মৃত্যু

 

জীবন-মরণ সমস্যা হলেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি ডেঙ্গু। সে কারণে শুধু অবহেলায় ২০২৩ সালে এক হাজার ৭০৫ জন মানুষ মারা গেল ডেঙ্গু ভাইরাসে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এমনিতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের একটি। সে কারণেই দুদক দুর্নীতি বন্ধে ২০১৯ সালে ২৫ দফা সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই সুপারিশ যে বাস্তবায়ন হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত ‘শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতি’ হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন।

 

২০২৩ সালে দেশে এক হাজার ৭০৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। ভয়াবহ করোনাভাইরাসের চেয়ে ২০২৩ গড়ে ডেঙ্গুর মৃত্যু বেশি ছিল। ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে প্রতি বছর গড়ে মৃত্যু হয়েছে ০.৩৬ জনের। কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল ০.৫৩ শতাংশ। সরকারি হিসাবেই দেশে ২০২৩ সালের শেষ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে শনাক্ত হয়েছে তিন লাখ তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ডেঙ্গুর মৃত্যুর জন্য যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও দায়ী। মশা মারার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এককভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৯৮০ জন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সরকারি হিসাবে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এক লাখ ১০ হাজার আটজন। ডেঙ্গু শনাক্তের তুলনায় ঢাকায় মৃত্যুহার ছিল ০.৮৯ শতাংশ।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় পুরনো কীটনাশকই বারবার ব্যবহার করা হয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণে। এই কীটনাশকে মশা মরে না, মশার গায়ে কীটনাশক লাগলে মশা কিছু সময় মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে কিন্তু কীটনাশকের প্রতিক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে মশা আবার উড়ে চলে যায়। মশা নিয়ন্ত্রণে সর্বাধুনিক ‘ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) প্রয়োগ করার চিন্তাভাবনা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৫ টন বিটিআই আমদানির কার্যাদেশ দিয়েছিল মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে। কিন্তু তা ছিল ভেজাল বিটিআই। শেষ পর্যন্ত ডিএনসিসি সেই বিটিআই ব্যবহার করেনি। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়গুলোর হলেও চিকিৎসার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। ঢাকা ডেঙ্গুর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা থাকলেও ঢাকার বাইরে জেলা হাসপাতাল অথবা উপজেলা হাসপাতালে যথেষ্ট চিকিৎসা ছিল না। ফলে জীবন বাঁচাতে রোগীদের ঢাকায় আসতে হয়েছে। ২০২৩ সালে ঢাকায় ৯৮০ জনের মৃত্যু হলেও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে ৭২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে : স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত বলেছেন উচ্চ আদালত। চলতি বছরের ৯ মে উচ্চ আদালতে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, স্বাস্থ্যখাতে শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি রয়েছে। হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, সব কিছুরই একটা সীমা থাকতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব সময় কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত। একমাত্র আল্লাহই জানেন ওই কেনাকাটায় কী থাকে, আপনারা ১৭ কোটি মানুষের টাকা খাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য খাতের প্রধান সমস্যা কেনাকাটায় দুর্নীতি : অব্যবস্থাপনা ও কেনাকাটায় দুর্নীতি স্বাস্থ্য খাতের প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক। তিনি বলেন, এই দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে প্রচলিত যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার ভেতর দিয়ে সম্ভব নয়। এই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জরুরি।

আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যু : কুমিল্লার মেয়ে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের কর্তব্য অবহেলা হিসেবে আলোচিত ঘটনা ছিল ২০২৩ সালে। ৯ জুন প্রসব বেদনা নিয়ে আঁখি রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। সে দিন রাতে তার নবজাতকটির মৃত্যু হয়। সেন্ট্রাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা: সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি হলেও ডা. সাহা দেশেই ছিলেন না। অবশেষে ১৮ জুন রোববার ভোরে আঁখি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/803138