১ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৫:৫০

অস্থিরতা ছিল নিত্যপণ্যের বাজারে

 

বছরজুড়েই অস্থিরতা বিরাজ করছিল নিত্যপণ্যের বাজারে। পেঁয়াজ-তেল, চিনি-রসুন এমনকি বাদ যায়নি কাঁচামরিচ-শাকসবজিও। পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তিন বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খেয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আয়ের সাথে ভারসাম্য রাখতে কাটছাঁট করতে হয় প্রতিদিনের বাজার তালিকা। দাম বাড়ার পেছনে সঙ্কটের চেয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজিই ছিল বেশি। এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি।

বিশ্ববাজারে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের দাম কয়েক মাস ধরেই নিম্নমুখী। আবার দেশেও এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ছে বলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে উঠে আসছে। যদিও দেশের বাজারে চলতি বছরের পুরো সময়জুড়েই মারাত্মক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে কৃষিপণ্যের দাম। বছরজুড়ে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মেলেনি। দফায় দফায় বেড়েছে তেল-চিনি-পেঁয়াজের দাম। বছরের শেষের দিকে এসে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর দেশের বাজারে ২৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। বিভিন্ন সময়ে এসব কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসৃষ্ট বৈশ্বিক সঙ্কটকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, যুদ্ধের দোহাই দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। বাজারে যথাযথ নজরদারি না থাকায় খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে পণ্যের উচ্চমূল্য শুধু বাহ্যিক বা আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে নয়। এর পেছনে আছে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব, বাজারের সিন্ডিকেট, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা। এমন পরিস্থিতেতে সারা বছর প্রশ্ন উঠেছে, ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কে? সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট কি বেশি শক্তিশালী? এরপর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ‘অসহায়ত্ব’ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের সাথে পেরে উঠছে না সরকার। এমনকি বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকেও কয়েক দফা বাজার সিন্ডিকেট প্রতিরোধের তাগিদ দিতে হয়েছে।

এ দিকে লাগামছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর সরকার বেশকিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আলু, ডিম অন্যতম। তবে বাজারে কোনো পণ্যই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। এখনো সেগুলো নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ডিমের দাম কমেছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বছরজুড়ে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পেছনে ছুটেছে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ। খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে শুরুর মতো বছরের শেষ ভাগেও মানুষের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে। চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম থাকায় অনেকে ওএমএসের চাল-আটা বা টিসিবির পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/802894