১ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৫:৪৯

ডিম ভাজি আর হাঁসের প্যাঁক প্যাঁকে সরগরম শিক্ষাঙ্গন

 

স্কুলে শিক্ষার্থীদের ডিম ভাজি আর প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক শব্দ শেখানো নিয়ে বছরজুড়েই সরগরম ছিল শিক্ষাঙ্গন। এ ছাড়া শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘিরে সারা বছরই চলেছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। শেষদিকে এসে তা গড়িয়েছে আন্দোলনে। নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করে গ্রেফতার হয়েছেন অভিভাবক-শিক্ষকও। বেসরকারি শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি- দাওয়া নিয়েও উত্তাপ ছিল রাজপথ। অন্য দিকে বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও।
২০২৩ সালে এসএসসি-এইচএসসিতে নিম্নমুখী ফল, নতুন পাঠ্যবই ছাপাতে বিলম্ব, এক দশক পর প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদোন্নতি, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, কিন্ডারগার্টেন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা, এক বছরে তিন বিসিএসের ফল প্রকাশ, গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির রেষারেষি, হরতাল-অবরোধে বার্ষিক পরীক্ষাসহ নানান ঘটনায় আলোচনায় ছিল ২০২৩ সালের সার্বিক শিক্ষাখাত।

গেল বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল বিতর্কিত পাঠ্যসূচি। সরকার অনেক ঢাকডোল পিটিয়ে ২০২৩ সালের শুরু থেকে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের কয়েকটি শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচি চালু করে। তবে শুরু থেকেই অনেক বিরোধিতা আর সমালোচনাও হয়েছে এ নিয়ে। তারপরেও প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন এই শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এক পক্ষ বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী। অন্যপক্ষ শিক্ষাক্রমের কড়া সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বর্তমান বাস্তবতায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যথাযথ প্রস্তুতির অভাব, শিক্ষার্থীর চাপ, দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের সঙ্কট, মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও প্রথাগত মনোভাবের কারণে এই শিক্ষাক্রম এখনি আমাদের দেশে বাস্তবায়নের জন্য উপযোগী নয়। অবশ্য অন্য দিকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ও এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলে আসছেন অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করা হবে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যে ধরনের ক্লাস রুম, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ প্রয়োজন তা সরকার দেবে। আগামীতে শিক্ষা হবে দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প।

ফলাফলের দিক দিয়ে ২০২৩ সালটি ছিল শিক্ষার্থীদের মন খারাপের বছর। কেননা ২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুটোই কমেছে। এসএসসির ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।

জাতীয় নির্বাচনের বছর হওয়ায় পাঠ্যবই ছাপা নিয়েও লেজেগোবরে অবস্থায় ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের পাণ্ডলিপি প্রস্তুতিতে দেরি, টেন্ডারে অনিয়মসহ নানান কারণে এখনো সব বই ছাপানো সম্ভব হয়নি। তবে বছরের প্রথম দিনে কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কৌশলে এগোচ্ছে এনসিটিবি।
নতুন বছরে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে কৌশলে নেয়া হয়েছে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী- কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি যেসব স্কুল রয়েছে, তা সবই ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে অভিহিত হবে। স্কুলে পাঠদান শুরু করতে অনুমতিপত্র লাগবে। অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যেই যথাযথ নিয়ম মেনে নিবন্ধন করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/802895