৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১:৫৫

মধ্যস্বত্বভোগীর পেটে যাচ্ছে হাজার কোটি টাকা

 

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে সিমেন্টের এক টন কাঁচামাল নিতে ২ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি বড় লাইটার জাহাজের সব মিলিয়ে টনপ্রতি খরচ হয় সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। অথচ এ রুটে পণ্য নিতে ব্যবসায়ীদের এখন টনপ্রতি প্রায় ৪১৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতি টনে বাড়তি ১৬৫ টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পেটে। চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টন পণ্য যায় সারাদেশে। সেই হিসাবে লাইটার জাহাজ পরিচালনা করেই মধ্যস্বত্বভোগীরা পকেটে প্রতিদিন ভরছে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। মাসের হিসাবে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪৯ কোটি এবং বছরে ৫৯৪ কোটি টাকা! মূলত লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বা ডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণেই এ খাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে বলে দাবি জাহাজ মালিকদের। শুধু বাড়তি খরচ নয়; বুকিং পেতেও পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

এ কারণে ১৯ ডিসেম্বর প্রায় ২৫০টি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক মালিকরা আলাদা হয়ে গঠন করছেন নতুন সংগঠন ‘ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং (আইভোয়াক)’। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাহাজ বুকিংয়ের নতুন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। কিন্তু তাদের এ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডব্লিউটিসির অধীন সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) বিরুদ্ধে। আইভোয়াক নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের বুকিং দেওয়া চারটি জাহাজে গত বুধবার হামলা চালিয়েছে বিসিভোয়া নেতাদের পাঠানো সন্ত্রাসীরা। তবে বিসিভোয়ার দাবি, নিয়ম না মেনে জাহাজ বুকিং দেওয়া ও বকেয়া রাখায় কিছু জাহাজে বাধা প্রদান করছে তারা। এটা নিয়ে বিসিভোয়া ও আইভোয়াক এখন মুখোমুখি। 

জানা গেছে, উভয় সংগঠন বর্তমানে আলাদাভাবে দিচ্ছে জাহাজের বুকিং। এটা নিয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সামনে উভয় সংগঠনের নেতাদের বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়েছে। সমস্যা সমাধানে মহাপরিচালক উভয় পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দিলেও সমাধান হয়নি সমস্যার। উল্টো হামলা, পাল্টা সংবাদ সম্মেলন এবং মামলায় জড়িয়েছে সংগঠন দুটি। 
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যের ৮০ শতাংশই বহির্নোঙর থেকে চলে যায় দেশের ৩৬টি নৌঘাটে। এসব পণ্য পরিবহনে আছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ লাইটার জাহাজ। এর মধ্যে ডব্লিউটিসির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দেড় হাজার লাইটার। বাকিগুলো দিয়ে বিভিন্ন শিল্প মালিকরা নিজ তত্ত্বাবধানে নিজেদের পণ্য আনা-নেওয়া করেন। অনেক জাহাজ মালিকের অভিযোগ, ডব্লিউটিসি এখন বাড়তি ভাড়া আদায় করে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে মুনাফার অংশ নিয়ে যাচ্ছে। বুকিং দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই সেল অনিয়মের 

আশ্রয় নিচ্ছে। অথচ এই সেলের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। অবৈধ সংগঠন হয়েই তারা জাহাজ পরিচালনা করছে এবং লাভের টাকা পকেটে ঢোকাচ্ছে। এজন্য নতুন সংগঠন করে জাহাজ পরিচালনা করছে আইভোয়াক।

তবে আইভোয়াকের এই দাবি মানতে নারাজ ডব্লিউটিসি। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ বলেন, ‘আমরা লাইটার জাহাজ বুকিং, পরিবহন ও পরিচালনার একমাত্র বৈধ সংস্থা। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম চেম্বারের সহায়তায় ডব্লিউটিসি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। হঠাৎ নতুন সংগঠনের নামে কেউ এসে এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারবে না।’ ডব্লিউটিসি মধ্যস্বত্বভোগী নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা জাহাজের বুকিং দিই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। পরিচালনা কার্যক্রম মসৃণ রাখি। এটার বিনিময়ে ন্যূনতম লাভ গ্রহণ করি।’ 

বিসিভোয়ার সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘ইচ্ছা হলো তাই নতুন একটা সংগঠন করে জাহাজ পরিচালনা করা যাবে না। জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে হলে নিয়ম মানতে হবে। অন্যথায় বাধা দেওয়া হবে।’ অনেক জাহাজ মালিকের কাছে কোটি কেটি টাকা বকেয়া থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যাদের বকেয়া আছে, তারা এখন নতুন সংগঠনে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আসল সত্য লুকানো যাবে না।’

https://samakal.com/whole-country/article/215759