৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১:৫০

সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশের মিডিয়া ব্রিফিং

৭ জানুয়ারি আত্মঘাতী নির্বাচন হতে যাচ্ছে

হলফনামায় প্রার্থীর ৫০০ গুণ সম্পদ বেড়েছে আয়কর কি ৫০০ গুণ বেড়েছে : ড. দেবপ্রিয়

আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে একটি সাজানো ও আত্মঘাতী নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনপরবর্তী সময়ে দেশে অনেক কিছুই হবে। আমরা একটি আত্মঘাতী প্রতিযোগিতায় নামছি। অন্য দিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নিজেরা পরিবর্তন করতে না পারলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে এখানে পরিবর্তন করে দিতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া অনেক প্রার্থীর আয় ৫০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার প্রশ্ন : তাদের আয়কর দেয়া কি ৫০০ গুণ বেড়েছে? এই বিষয়টি এনবিআরকে দেখতে হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ আয়োজিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই ভোট দিতে যাবে না, তবে ভোটাররা ভোট দিতে না গেলেও হয়তো তাদের ক্ষমতাসীনদের নজরদারির মধ্যে পড়তে হবে। তবে সবকিছু আইনগতভাবেই হবে, এমনকি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না। সর্বোপরি এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দলের ক্ষমতাও পাকাপোক্ত হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন হবে, কিছুদিন প্রতিবাদ হবে, এরপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হবে, বিদেশী অংশীজনরাও অনেকেই নাখোশ হবে। এমনকি কিছুদিন তারা প্রতিবাদ করবেন, এরপর আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। বিদেশী অংশীজনরাও ব্যবসায় চলে আসবে।
নির্বাচনী হলফনামা প্রসঙ্গে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে হলফনামা এসেছে, তা হলো আমি আমার প্রার্থীর সম্পর্কে জানব, তার আয়-ব্যয় ও সম্পদ সম্পর্কে জানব এবং সে অনুযায়ী আমি আমার রায় দেবো। এটা ছিল আমাদের প্রত্যাশার জায়গা; কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা কিছুই করতে পারিনি। হলফনামা নিয়ে আমরা যেভাবে কথা বলছি, আগামী সংসদে হয়তো হলফনামা প্রথাটিই বাতিল হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি বাস্তবে ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা এবং সৎসাহস থাকত, তাহলে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারত। এমনকি আইন অনুযায়ী তথ্য গোপনের কারণে অনেকেরই প্রার্থিতা বাতিল হতো। কারণ এবার শুধু তথ্য গোপনই হয়নি, দৃষ্টান্তও স্থাপনও হয়েছে; কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে অর্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে জবাবদিহি এবং আইনগতভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার আছে। আইনের চোখে সবাই সমান, এই দৃষ্টিতে দুর্নীতি দমন কমিশন যদি কাজ করত, তাহলেও অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারত না। তবে নির্বাচন কমিশনের একটা বুলি আছে- অভিযোগ এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদকের আইনেই কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। দেশবাসীর চোখে অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো আসছে; কিন্তু তাদের চোখে পড়ছে না।

অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা যদি নিশ্চুপ থাকি, তাহলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না। আমাদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ, তারা যদি ভূমিকা না রাখে, তাহলে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দেখছি যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় গাণিতিকভাবে সে পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় ততবার বেড়েছে। তার মানে হলো নির্বাচনে আসাই হলো আয় বাড়ানোর ভালো একটা রাস্তা। কিন্তু এভাবে তো আপনি পুরো রাষ্ট্রকে অধিকারহীন করে দিয়ে সঙ্কীর্ণ একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক করে দিচ্ছেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে যতবার নির্বাচিত হয়েছে, গাণিতিক হারে তার সম্পদ তত বেড়েছে। অনেকেরই দেখা গেছে- সম্পদের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে; কিন্তু তারা কি সেই সম্পদ অনুপাতে আগের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি কর দিয়েছেন? এনবিআর কি কখনো সেই খোঁজ নিয়েছে?

দেবপ্রিয় বলেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি হলফনামার মাধ্যমে। সেখানে যে সম্পদের বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং যে ট্যাক্সের বিবরণ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর কি কখনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়? আমি মনে করি আগামী দিনে এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, আইএমএফ বলছে আমাদের কর জিডিপি বাড়াতে হবে, আমি মনে করি এই হলফনামা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এখন এনবিআর কী করে সেটিই দেখার বিষয়। তারা কি আগামী দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন?

এই নির্বাচনকে ‘বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাকে সাধারণভাবে আমরা নির্বাচন বলছি।
এ সময় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখন সমান্তরাল বাস্তবতায় অবস্থান করছি। আমাদের অনেক অর্জন আছে, যেগুলোর জন্য আমরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করি। তবে এসব অর্জনের পেছনে আমাদের কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো যথেষ্ট বৈষম্য আছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্যতায় সমস্যা আছে। বিডিএসের খানা জরিপেও বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/802687