৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১:১১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিনব উদ্যোগ

 

রিজার্ভের অব্যাহত নি¤œমুখীতার প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এই উদ্যোগ কতখানি সফল হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের জন্য ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাজারে এখনো ডলার সঙ্কট আগের মতই রয়েছে। যদিও ডলার বিক্রি করার মতো পরিস্থিতিতে নেই ব্যাংকগুলো। এরপরও কিছু ব্যাংক উচ্চমূল্যে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনে তা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

ব্যাংকগুলো এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার কিনছে। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম হচ্ছে ১১০ টাকা। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ১১০ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে নিজেদের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলার কিনছে ১১২ টাকায়। আবার ইসলামি ও প্রচলিত ধারার কিছু ব্যাংক ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কিনছে বলে শোনা যায়। উচ্চ মূল্যে কেনা ডলার তারা কম মূল্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।

সূত্র বলছে, ডলার কেনাবেচা করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কাজের অংশ। সে হিসাবে বাজারদরেই কেনা হচ্ছে। যারা বেশি প্রবাসী আয় আনছে ও উদ্বৃত্ত আছে, তাদের কাছ থেকে ডলার কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি চলতি মাসে দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ এসেছে। তাতে রিজার্ভ বাড়ছে। রিজার্ভ এখন আইএমএফের বেধে দেওয়া লক্ষ্যের কাছাকাছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত ৩০ নবেম্বর মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার, যা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে ৭ ডিসেম্বর রিজার্ভ কমে ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে নামে, যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এরপর ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ আরেকটু কমে হয় ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন, তবে বিপিএম ৬ অনুযায়ী এবার বেড়ে ১৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। এরপর গত বুধবার রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। আইএমএফের ঋণের কিস্তি ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে বাজেট সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হওয়ার ফলে রিজার্ভ বেড়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরের শেষে বাংলাদেশকে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। তবে বুধবার নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। রিজার্ভ বাড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি ডলারের কিছু বেশি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধের হিসাবে থাকা ডলার কিনেও রিজার্ভ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র দাবি করেছে, ‘আইএমএফের শর্তানুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তা পুরোপুরি না হলেও লক্ষ্যের কাছাকাছি থাকব। রিজার্ভ আর ক্ষয় হচ্ছে না, আইএমএফ এটা দেখতে চায়। সংখ্যাটা বড় বিষয় নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক থেকে ডলার কিনে হলেও আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ করা দরকার। তা না হলে পরের কিস্তি পেতে সমস্যা হতে পারে। তবে ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে লোকসানে ফেলে ডলার কিনছে, এটা বোধগম্য নয়।

দেশে দেড় বছর ধরে চলা ডলার সঙ্কট কোনভাবেই কাটছে না। আমদানিতে ডলারের দাম নথিপত্রে ১১০ টাকা হলেও বাস্তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২৮ টাকায়ও বেচাকেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সূত্রগুলো জানিয়েছে, কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক সরাসরি এভাবে বিক্রি করছে, আবার কিছু ব্যাংক পে-অর্ডারের মাধ্যমে ডলারের বাড়তি দাম সংগ্রহ করছে। আমদানিকারকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারকেরাও আছেন বিপদে। তাদের ডলার নির্ধারিত দামে কিনে নিচ্ছে ব্যাংক, পরে আবার তাদেরই বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি দায় শোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছেই।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়ানো কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আর যে প্রক্রিয়ায় ডলার কেনা হচ্ছে তা ব্যাংকগুলোকে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। তাই বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য সমস্যার গোড়ায় হাত দেওয়া উচিত। বাড়ানো দরকার বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহ। অন্যথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিনব উদ্যোগ কোনভাবেই ফলদায়ক হবে না।

https://www.dailysangram.info/post/544679