২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:৫৬

বাড়ছে করোনা, আবারও টিকাদানের পরিকল্পনা

 

ভারতসহ বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের উপধরন জেএন.১ প্রতিরোধে সতর্ক রয়েছে সরকার। নতুন এই উপধরন দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রমও শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী শনিবার এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

করোনাভাইরাস রোধে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে টিকাদান শুরু করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ প্রয়োগ বন্ধ করা হয়। পরে টিকা সংকট ও মানুষের আগ্রহ না থাকায় ধীরে ধীরে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গুটিয়ে নেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন কেন্দ্রে থাকা প্রায় পাঁচ লাখ টিকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। করোনার নতুন উপধরন প্রতিরোধে ৯ মাস পর আবার করোনার টিকা প্রয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। এবারও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। এর ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৪ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪২ জন দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। সেই হিসাবে প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়নি। তৃতীয় ডোজ নিয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার এবং চতুর্থ ডোজ নিয়েছে ৫০ লাখ ৫০ হাজার। এখনও ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ এক ডোজও টিকা নেয়নি।

দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। অনেক দিন ধরে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল। তবে গতকাল হঠাৎ করে সংক্রমণ ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। ৪০৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার শনাক্ত হয় পাঁচজন, হার ছিল ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে মৃত্যুহারও বেশ কয়েক মাস ধরে শূন্যের কোঠায় রয়েছে। কিন্তু নতুন উপধরন চীন ও ভারতে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)  সতর্ক করে বলেছে, এবারের শীতজুড়ে জেএন.১-এর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে, যার প্রমাণ ইতোমধ্যেই মিলেছে। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ এড়াতে এবং দেশের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতে বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে জরুরি ভিত্তিতে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়ারও পরামর্শ তাদের।

করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে যে টিকা মজুত রয়েছে। এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবে নতুন করে করোনার টিকা কিনতে হলে অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ দেশে বর্তমানে ডলার সংকট রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এখনও যারা টিকা নেয়নি তাদের টিকা নেওয়ার সুযোগ রেখেছে সরকার। তবে নতুন শঙ্কার বিষয় ওমিক্রনের এই উপধরন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে এর সংক্রমণের হার বেশি। ফের টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন সময় যারা করোনার টিকা নিয়েছে, তাদের নতুন উপধরন থেকে সুরক্ষা মিলবে। তবে দীর্ঘদিন টিকাদান কর্মসূটি বন্ধ থাকা ও নতুন টিকা গ্রহণ না করায় এখন দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি হারিয়েছে। তাই নতুন করে টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া ভালো উদ্যোগ। বিশেষ করে যারা এখনও এক ডোজও টিকা নেয়নি, তাদের চিহ্নিত করে টিকা দিতে হবে। যারা বুস্টার নেয়নি তাদেরও টিকা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই তথা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী শনিবার করোনা টিকা কর্মসূচির জাতীয় পরামর্শ কমিটির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা আগামী বছরের শুরুতে এই টিকা প্রয়োগ করার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে সব প্রস্তুতি রেখেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে এখনও সাত লাখ টিকা রয়েছে। এই টিকা দেশে এসেছে গত ১৭ নভেম্বর। এই টিকার মেয়াদ ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত রয়েছে। নতুন বছরে আরও ৬২ লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে।

 

https://www.samakal.com/bangladesh/article/215233