২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:৩২

দূষণে অস্বস্তিতে ছিল ঢাকা

 

চলতি বছরের শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত বায়ুদূষণে অস্বস্তিতে ছিল ঢাকা। বছর শুরুর পর থেকে ধাপে ধাপে কখনো বিশ্বে প্রথম স্থানে আবার কখনো তার নিচে অবস্থান করছে ঢাকা নগরী। এখানেই শেষ নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাও দূষণ থেকে বাদ যায়নি। ধাপে ধাপে স্থানীয়পর্যায়ে দূষিত নগরীর তালিকায় স্থান পেয়েছে দেশের একাধিক জেলা। এর আগে জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। তখন মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কিন্তু নগরীর এত দূষণ সত্ত্বেও তার প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্টরা; বরং নগরের শোভা বর্ধনের নামে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছ কেটে আলোচনায় এসেছে সিটি করপোরেশন। একপর্যায়ে পরিবেশবাদীদের টানা প্রতিবাদে একপর্যায়ে তা বন্ধ হয়। যদিও এর আগেই ধানমন্ডিসহ একাধিক এলাকায় অনেক গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। এর মধ্যে গেল সপ্তাহে বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের তালিকায় স্থান পায় ঢাকা। ওই দিন বিদায়ী বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ নিয়ে বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। এতে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে বারবার দূষণের তালিকায় বারবার ঢাকার শীর্ষে চলে আসার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণকে চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে প্রতি বছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর বেশ আগে থেকেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ড. কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, এ বছরের নভেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি তিন দিনের মধ্যে যেকোনো এক দিন দিনের কোনো না কোনো সময়ে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং তার বায়ুর মান সূচক ৩৩০ এর উপরে থাকছে।

তার মতে, গত আট বছরের চেয়ে গড়ে এই বছরে ১০ ভাগেরও বেশি বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটা বড় শঙ্কার বিষয়। আগের কয়েকটি বছরের ধরন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বায়ুর মান এতটাই খারাপ থাকে যে এই পাঁচ মাসে সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।

রাজধানীতে নির্মাণকাজে নিয়ম না মানার কারণে এমনটি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজধানীতে সারা বছরই ছোট-বড় অজস্র ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামতের কাজ চলে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প। যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ করার সময় বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে সেসব নিয়ম পালন না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বা মেরামতের সময় ধুলাবালু বাতাসের সাথে যেন মিশে না যায়, সে জন্য নির্মাণ স্থানে যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনী দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই সাথে বেষ্টনীর ভেতর ও বাইরে নির্মাণসামগ্রী (মাটি, বালু, রড, সিমেন্ট প্রভৃতি) যথাযথভাবে ঢেকে রাখা এবং দিনে কমপক্ষে দু’বার স্প্রে করে পানি ছিটানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

এ ছাড়া নির্মাণাধীন রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা এবং নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করার কথা বলছে পরিবেশ অধিদফতর। কেউ এসব নিয়ম পালন না করলে সে ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি জরিমানা আরোপ করতে পারবে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এত অনিয়মের পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

যদিও এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোতালিবের ভাষ্য, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বায়ুদূষণে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের একটা ভূমিকা আছে। এখন এই শীতকালে এর অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। এর বাইরে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া আছে। যানবাহন ও ইটের ভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/801941