২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:২৭

মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ : বেড়েছে জাতীয়পর্যায়ে আয়বৈষম্য

 

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। বর্তমানে জাতীয়পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসেবে এই অঙ্ক আরো অনেক বেশি। বিশেষ করে শহরের মানুষকে বেশি ঋণ করতে হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। বিবিএস বলেছে, ২০২২ সালে জাতীয়পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। আবার ২০২২ সালে আয় গিনি সহগ অনুযায়ী জাতীয়পর্যায়ে আয়বৈষম্য ০.৪৯৯। যেখানে ২০১০ সালে জাতীয়পর্যায়ে গিনি সহগ ছিল ০.৪৫৮। আয়বৈষম্য বেড়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে গতকাল ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০২২’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন, ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্র্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো: কাউছার আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। গড়ে পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৪.২৬ ধরে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ২০১৬ সালের একই জরিপে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ২৪৩ টাকা। মাথাপিছু ঋণ ছিল ৯ হাজার ১৭৩ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে প্রতিটি পরিবারের ঋণ বেড়েছে ১১১.১০ শতাংশ। ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড়ে ঋণ জাতীয় পরিবারের ঋণের প্রায় আড়াই গুণ। ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ এক লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ টাকা। এসব পরিবারের মানুষের গড়ে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯৬৯ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। নিম্ন দারিদ্র্যরেখা ব্যবহার করে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যহার জাতীয়পর্যায়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, পল্লী এলাকায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে ২০১৬ সালে নিম্ন দারিদ্র্যরেখা ব্যবহার করে অতি দারিদ্র্যহার ছিল জাতীয়পর্যায়ে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, পল্লী এলাকায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ব্যাক-ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে এইচআইইএস ২০১৬-এর অতি দারিদ্র্যহার ছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ (নিম্ন দারিদ্র্যরেখা)। সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১৬ থেকে ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে।

বিবিএস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ দারিদ্র্যহার পাওয়া গেছে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দারিদ্র্যহার থাকলেও এবার সেটি বরিশালে গেছে। উচ্চ ও নিম্ন উভয় দারিদ্র্যরেখার মাধ্যমে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের বিভাগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরে বরিশালে উচ্চ দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী দারিদ্র্যহার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নিম্ন দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৮ শতাংশ পাওয়া যায়। অন্য দিকে বিভাগগুলোর মধ্যে উচ্চ দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী, খুলনায় দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ঢাকায় নিম্ন দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। শহর এলাকার তুলনায় পল্লী এলাকায় মধ্যম বা মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী জাতীয়পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। যেখানে ২০২২ সালে পল্লী এলাকায় এ হার ছিল ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে ২০২২ সালে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন। বিবিএস জরিপ বলছে, ২০২২ সালে আয় গিনি সহগ অনুযায়ী জাতীয়পর্যায়ে আয়বৈষম্য ০.৪৯৯, পল্লøী এলাকায় ০.৪৪৬ এবং শহর এলাকায় ০.৫৩৯, যা ২০১৬ সালে জাতীয়পর্যায়ে ছিল ০.৪৮২, পল্লøী এলাকায় ০.৪৫৪ এবং শহর এলাকায় ০.৪৯৮। ২০১০ সালে জাতীয়পর্যায়ে গিনি সহগ ছিল ০.৪৫৮, পল্লী এলাকায় ০.৪৩১ এবং শহর এলাকায় ০.৪৫২। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, উচ্চ আয়বিশিষ্ট শ্রেণীর আয় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/801966