১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৭:৪৫

তারল্যসংকটে ৪০ ব্যাংক

 

ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মানুষের সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার প্রবণতার প্রভাবে ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি অন্তত ৪০টি ব্যাংক তারল্যসংকটে ধারদেনা করে চলছে।

এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছে না। এই পাঁচটি ব্যাংককে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু সেই জরিমানা পরিশোধের মতো অবস্থাও নেই ব্যাংকগুলোর। বিরাজমান পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে ওই পাঁচ ব্যাংককে ২০ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ সমন্বয়ের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল রোববার সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে‌ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, পাঁচ ইসলামি ব্যাংক ২০ কর্মদিবসের মধ্যে ঘাটতি সমন্বয় না করলে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ ইস্যুতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ। বিভিন্ন ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাপোর্ট দেওয়া হয়, যা পরে সমন্বয় করে নেওয়া হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলতি হিসাবে ঘাটতি ব্যাংকগুলোর একটি কাঠামোগত সমস্যা। তবে ঋণের মান, বৈদেশিক লেনদেনসহ অন্যান্য পোর্টফোলিও ভালো এসব ব্যাংকের।

জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বরে পাঁচ ইসলামি ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘চিঠি পাওয়ার ২০ কর্মদিবসের মধ্যে চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আপনাদের সম্পাদিত “ক্লিয়া‌রিং সে‌টেল‌মেন্টের জন্য নির্ধারিত হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ” চুক্তি মোতাবেক আপনাদের নির্দিষ্ট ক্লিয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বিরত রাখা হবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ২০ দিনে সমন্বয় না কর‌লে ব্যাংকগু‌লোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে। ইসলামি ধারার পাশাপাশি ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংকে তারল্যসংকট রয়েছে। বাজারে ডলার ছেড়ে টাকা তুলে নেওয়ায় নগদ টাকা কমেছে।

মুখপাত্র বলেন, আইএমএফের ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৪০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয়েছে ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংকে মারাত্মক তারল্যসংকট রয়েছে। এসব ব্যাংক নগদ টাকা ধার করে চলছে। ব্যাংকগুলো রেপো ও তারল্য-সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ডলার বিক্রি করে নগদ টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়ায় তারল্যসংকট প্রকট হয়েছে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের কারণে তারল্যঘাটতি অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। ফলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ দরকার।

 

 

https://www.ajkerpatrika.com/308713