১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৭:২৩

চাঁদার কারণে অস্থির মুরগির বাজার

সরেজমিন কাপ্তানবাজার

 

রাজধানীর কাপ্তানবাজারে গভীর রাতে মুরগির বাজারে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ জোরপূর্বক ট্রাক থামিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গভীর রাতের এই মুরগির বাজার ঘিরে রয়েছে স্থানীয়দের ক্ষোভ। ব্যাপক চাঁদাবাজি আর নানা অনিয়মের কারণে কেজি-প্রতি মুরগির দাম বাড়ে ১০/২০ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা পুরোপুরি এ বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী মুরগি সরবরাহ করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঢাকার কাপ্তানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

প্রতিদিন গভীর রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত ট্রাকে মুরগি আসে কাপ্তানবাজারে। সেখান থেকেই পাইকারদের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন বাজারে তা সরবরাহ করা হয়। এই পাইকারি বাজারটিতে ব্যবসা শুরু হয় প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ মুরগির গাড়ি-ট্রাক কাপ্তানবাজারে ঢোকে। এ সময় ট্রাক-প্রতি দুই হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন গড়ে কাপ্তানবাজারের একমাত্র মুরগির বাজার থেকে আট থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা ত্রিমুখী ভাগ হয়। বেশির ভাগ টাকা পায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা। বাকি দুই ভাগ পাচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পদ বিপণনের কর্মকর্তারা। তা ছাড়া ভাগবণ্টনের টাকা নিয়ে প্রায় দেখা যায় মারামারি।

কাপ্তানবাজার পোলট্রি মুরগি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো: কাজি বোরহান জানান, কাপ্তানবাজারে গভীর রাতের এই মুরগির বাজারটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা থাকলেও তা থাকছে না স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সহযোগীদের কারণে। এখানে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত মুরগি ট্রাক কাপ্তানবাজারে প্রবেশ করা মাত্র চিহ্নিত চাঁদাবাজরা ট্রাক থামিয়ে পুলিশের সামনেই চাঁদা আদায় করছে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কাপ্তানবাজারের ক্ষুদ্র মুরগি ব্যবসায়ী তমিজউদ্দিন জানান, বাজারে মুরগির দাম বাড়ে না; কিন্তু দাম বাড়ায় এখানকার চাঁদাবাজরা। পুরো ঢাকা সিটিতে যত কাঁচাবাজার রয়েছে সব বাজারের মুরগি এখান থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। কাপ্তানবাজারের রাত্রিকালীন মুরগির বাজার চলে রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু কিছুদিন আগে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই মুরগির বাজার চলে যায় আনন্দবাজার নিমতলী মেইন রাস্তায়। সেখানে দুই মাস থাকার পর কাপ্তানবাজারের তালিকাভুক্ত দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা চালায়। পরে আস্তে আস্তে আবারো কাপ্তানবাজার মুরগির বাজারটি বসে।

তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফির লোকজন চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে প্রকৃত ইজারাদারদের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ইজারাদারসহ অনেক ব্যবসায়ী আহত হয়। চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজনের সাথে প্রায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কাপ্তানবাজারের পাইকারি মুরগির ব্যবসায়ী সোলেমান জানান, গভীর রাতে কাপ্তানবাজার এলাকায় শত শত ট্রাক আসে। প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়। টাকা না দিলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ট্রাক ড্রাইভারদের মারধর করে। আবার কেউ বাধা দিলে তারাও নির্যাতনের শিকার হয়।

এ ব্যাপারে ডিএমপির ওয়ারী থানার ওসি জানে আলম বলেন, কাপ্তানবাজার মুরগির ট্রাকে চাঁদাবাজি সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি নতুন এসেছি, আমি এসব কিছুই চিনি না। আমি ভোটকেন্দ্রগুলো জানার চেষ্টা করছি বলেন তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/799533