১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:৫০

বেশি শ্রমে কম আয় বাংলাদেশে

ভারতও পিছিয়ে, এগিয়ে পাকিস্তান

 

বিশ্বের কোন দেশের সম্পদ কত তা তুলনা করা প্রকৃত অর্থেই কঠিন। যেসব দেশের জনসংখ্যা বেশি, সেসব দেশের অর্থনীতিও বড়। তবে তার মানে এই নয়, সেসব দেশের নাগরিকদের আয় বেশি। সাধারণত ডলারে মাথাপিছু আয় নিরূপণ করার মধ্য দিয়ে একটি দেশের মানুষ কতটা ধনী বা কতটা গরিব তার পরিমাপ করা হয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যমূল্যের পার্থক্য কতটা বা সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরি উপার্জন করতে মানুষকে কত ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে, তার হিসাব মাথাপিছু জিডিপির মধ্যে থাকে না। ফলে তাতে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না।

এই বাস্তবতায় তিনটি সূচকের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের নতুন একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। ডলারে মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে পিপিপি (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) বা স্থানীয় বাজারমূল্য এবং প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য মানুষ কত মজুরি উপার্জন করছে, তার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে তালিকাটি।

এতে দেখা যাচ্ছে, কোনো দেশ মাথাপিছু আয়ে সবার ওপরে থাকলেই তারা যে এই তিন সূচকেও সবার ওপরে তা নয়। বড়জোর দুটি সূচকে একটি দেশ সবার ওপরে আছে, তিনটিতে নয়। যেমন মাথাপিছু আয় ও পিপিপিতে লুক্সেমবার্গ বিশ্বের শীর্ষ দেশ, তবে ঘণ্টাপ্রতি মজুরিতে তারা দ্বিতীয়।

ইকোনমিস্টের অনলাইনে শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বের ধনী দেশের নতুন এ তালিকাটি করা হয়েছে তিনটি সূচকের ভিত্তিতে। সাময়িকীটি মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে একটি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়।

তালিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কেও চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। বাজারের বর্তমান বিনিময় মূল্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৬৯০ ডলার। আবার পিপিপির হিসাবে তা ৭ হাজার ৪০০ ডলার। তবে সেই উপার্জন করার জন্য যে পরিমাণ সময় মানুষকে দিতে হয়েছে, তার নিরিখে মানুষের পিপিপি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬৩০ ডলার।

এতে দেখা যায়, প্রথম সূচক ছাড়া বাকি দুটিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। বর্তমান বিনিময় মূল্যের হিসেবে ভারতীয়দের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৩৯০ ডলার, পিপিপিতে ৮ হাজার ৩৮০ ডলার ও সেই উপার্জন করার জন্য যে পরিমাণ সময় মানুষকে কাজ করতে হয়েছে, তার নিরিখে ৮ হাজার ২০ ডলার।

পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৬০০ ডলার হলেও অন্যান্য দুই সূচকে তাদের অবস্থান ভালো। দেশটির পিপিপি ৬ হাজার ৪৪০ ডলার আর সেই উপার্জন করার জন্য যে পরিমাণ সময় মানুষকে কাজ করতে হয়েছে, তার ভিত্তিতে তা ৮ হাজার ৩১০ ডলার। এর মানে হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার এ তিনটি দেশের মধ্যে শ্রমঘণ্টায় আয়ের দিক থেকে পাকিস্তান এগিয়ে। সে তুলনায় পিছিয়ে আছে ভারত ও বাংলাদেশ।

তালিকায় দেখ যায় অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া কতটা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরুন। বাজার বিনিময় মূল্যের দিক থেকে দেশটির জিডিপি বিশ্বের বৃহত্তম। তবে মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে তারা সপ্তম, পিপিপিতে অষ্টম। মার্কিন নাগরিকদের এই পরিমাণ আয় করার জন্য যত কষ্ট করতে হয়েছে, তার ভিত্তিতে একাদশ।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের অবস্থা আরও খারাপ। মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে দেশটির স্থান ৬৫তম আর তৃতীয় সূচক অর্থাৎ সেই আয় করার জন্য যে পরিমাণ কাজ করতে হয়েছে, তার নিরিখে দেশটির অবস্থান ৯৬তম। যেসব দেশে কর্মসংস্কৃতি ভালো নয়, তাদের ক্ষেত্রে এসব সূচকে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। প্রথম সূচকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্থান ৩১তম, দ্বিতীয় সূচকে ৩০তম ও তৃতীয় সূচকে ৪৭তম।

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। যেমন বেলজিয়াম, জার্মানি ও সুইডেনের মতো দেশ দ্বিতীয় ও তৃতীয় সূচকে অনেক ভালো অবস্থায় আছে। তবে প্রথম সূচকে তারা অতটা ভালো নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই দেশের স্থানীয় বাজারে পণ্যের মূল্য এবং তাদের কর্মসংস্কৃতি অন্য অনেক দেশের জন্যই ঈর্ষার কারণ হতে পারে। স্থানীয় মূল্যের ভিত্তিতে লুক্সেমবার্গের মজুরি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি, আর ঘণ্টাপ্রতি সবচেয়ে বেশি মজুরি নরওয়েতে।

তবে ইকোনমিস্ট বলছে, এই পরিসংখ্যানও যথাযথ নয়। পণ্য ও সেবার মানে যে পার্থক্য আছে, পিপিপির হিসাব দিয়েও তা ধারণ করা সম্ভব নয়। শ্রমঘণ্টা নির্ধারণের পদ্ধতি একেক দেশে একেক রকম হতে পারে– বিশেষ করে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে। সেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত অনেক বড়। এসব দেশের ক্ষেত্রে এই হিসাব করা খুবই কঠিন। আবার অনেক দেশের পরিসংখ্যানে আস্থা রাখাই দুরূহ।

কিছু দেশের সঞ্চয়ের হার অনেক বেশি, যেমন চীন। সে কারণে ঘণ্টাপ্রতি জিডিপির হিসাব দিয়ে চীনাদের প্রকৃত জীবনযাত্রার মানের চিত্র পাওয়া যায় না।

ইকোনমিস্ট বলছে, এই ক্রমতালিকায় মানুষের গড় আয়ের চিত্র পাওয়া যায়, সম্পদের নয়। এতে দেখা যায়, কোন দেশে মানুষের অর্থ সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় আর কোথায় কম কাজ করে বেশি উপার্জন বা বেশি কাজ করে কম অর্থ পাওয়া যায়।

সাময়িকীটি ২০টি দেশের ক্রমতালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশ নেই। তবে বর্ণানুক্রমিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান কত নম্বরে তা বোঝা যাচ্ছে না। তালিকা তৈরিতে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) ও পেন ওয়ার্ল্ড টেবিলের তথ্য ব্যবহার করেছে ইকোনমিস্ট।

 

https://www.samakal.com/bangladesh/article/213260