১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:৩৮

জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৯ মাস সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ৬ হাজার ৪০১ জন

 

রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৬ হাজার ৪০১ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৭০ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৩১ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছেন ৭ জন। বাকি ৬৩ জন ক্ষমতাসীন দলের আন্তঃকোন্দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।

 

এদিকে চলতি বছর ১১ মাসে পুলিশি হেফাজতে ৯৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মাস উপলক্ষে ‘সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল রিসার্চের আয়োজিত মানবাধিকারের ধারণা ও বাস্তবতা: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।

জরিপ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা। এসময় তিনি বলেন, ২০২২ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৮ জন। যার মধ্যে নিহত ১২১ জন ও আহত ৭ হাজার ৪৬৭ জন। এছাড়া গত বছর ধর্ষন, যৌন নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৩৫৬ জন নারী। পাশাপাশি গত বছর ১ হাজার ৪১৫ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, গত বছর বিভিন্নভাবে নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৫৩ জন সাংবাদিক। এর মধ্যে ২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার, ৫ জন গ্রেফতার, ৪৩ জনকে হুমকি প্রদান, ১৬৫ জন আহত এবং ৩৮ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। ২০২২ সালে ক্রসফায়ারে ৭ জন, গুলিতে ১৩ জন ও নির্যাতনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন ৪৪৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে, যার সংখ্যা ৯৮ টি। আর সবচেয়ে কম গুমের শিকার হয়েছে ২০২২ সালে ৭ জন। একেএম বদরুদ্দোজা বলেন, ২০২২ সালে মন্দিরে হামলা হয়েছে ১২ টি, হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে ১৬ টি, মূর্তি ভাঙচুর হয়েছে ৪৩ টি এবং আহত হয়েছেন ৪৮ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ২০২১ সালে সংখ্যালঘু নিহত ৩, আহত ১০১ জন, বাড়িঘর ভাঙচুর ১৬১ টি, জমি দখল ৫ টি, মন্দিরে হামলা ১৮৯ টিসহ মোট ৭৮টি ঘটনা ঘটেছে।

ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের তো অনেক মানবাধিকার আইন রয়েছে। কিন্তু এই আইনগুলো আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না। আমরা সব সময় আইনগুলোকে পদদলিত করে আসছি। আমাদের এখানে কেউ গুম হয়ে গেলে তার আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এখন তো কথায় কথায় গুম হয়ে যাচ্ছে। এই যে লেখক মোশতাক আহমেদ। সে কাউকে খুনও করেনি। কিন্তু তাকে জেলে নিয়ে মেরে ফেলা হলো। এই কাজগুলো আমরা এখন অবলীলায় করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। আসলে নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। এখন এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। তার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।

সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল রিসার্চের প্রধান এডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট মো: মাসদার হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ প্রমুখ।

https://dailyinqilab.com/motropolis/news/624117