১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:৩২

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান

 

৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে অবনতিশীল পরিস্থিতিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলকে জোরালো ভাষায় চিঠি লিখেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের দুই প্রভাবশালী সদস্য। তারা হলেন জার্মানির কার্সটেন লুক এমইপি ও সুইডেনের ইলান ডি ব্যাসো এমইপি।

চিঠিতে দুই এমইপি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, বিগত সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিরোধী কর্মীদের ওপর সহিংস দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, বিরোধী দলের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মতে, প্রধান বিরোধী দলগুলোকে যখন হয়রানি করা হয়, তাদের কর্মীরা নির্যাতিত ও গ্রেফতার হয় এবং তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো হয়, তখন অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।

 

মি. লুক ও মি. ব্যাসো উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোর করে গুম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রেজ্যুলুশনে বিরোধী কর্মীদের গণগ্রেফতার এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একই সাথে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

দুই এমইপি মি. বোরেলের গণগ্রেফতার সংক্রান্ত ৫ নভেম্বরের এক্স টুইটের ওপর ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। টুইটে মি. বোরেল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। মি. লুক ও মি. ব্যাসো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এমন শান্তিপূর্ণ পথ খুঁজছে না, যার ঈঙ্গিত পাওয়া যায় গত সপ্তাহের ঘটনাগুলো থেকে।

মি. লুক ও মি. ব্যাসো তাদের চিঠিতে ইইউ এবা (Everything But Arms-EBA) পর্যবেক্ষণ মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টও তুলে ধরেন যাতে বলা হয়, শ্রম এবং মানবাধিকার উভয় ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মানবাধিকার বিষয়ে মূল এবা কনভেনশনগুলো মেনে চলার জন্য আরো প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এমইপিদ্বয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের ফলাফলের জন্য ইইউর নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা করা উচিত নয়, বরং আগেই স্পষ্টভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইইউকে সম্ভাব্য সব কিছু করতে হবে।

ইউরোপিয়ান দুই এমইপি চিঠির শেষভাগে জোসেপ বোরেল ও তার অফিসকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩’র পার্লামেন্টারি রেজ্যুলুশনে বর্ণিত সুপারিশ জরুরিভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার রূপরেখাও জানতে চেয়েছেন তারা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় মি. লুক ও মি. ব্যাসো বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/799078