১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:২১

রিজার্ভে সাময়িক স্বস্তি, মধ্যমেয়াদে অস্বস্তি

 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সাময়িক স্বস্তি ফিরেছে। তবে স্বল্প বা মধ্যমেয়াদে অস্বস্তি রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়সহ অন্যান্য কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ১৩১ কোটি ডলারের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে নিট রিজার্ভ বেড়ে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ঘর অতিক্রম করবে। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আবার ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসতে পারে। এদিকে আইএমএফ যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে চলতি অর্থবছরের শেষে গ্রস রিজার্ভ আরও কমবে। জুনের শেষে রিজার্ভ দাড়াবে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলারে।

সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে নানা ধরনের সংকট চলছে গত পৌনে দুই বছর ধরে। রিজার্ভ কমতে থাকায় ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। কমেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এতে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে গেছে। রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকার আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে কঠিন শর্ত মেনে। তারপরও রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমছে। গত বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ডলারে। গত দুই বছর চার মাসে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলার। প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।

এদিকে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৬৯ কোটি ডলার আজ শুক্রবার ছাড় হতে পারে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে জমা হলে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে। তখন রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩২ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে নিট রিজার্ভ হবে ১ হাজার ৯৮৬ কোটি ডলার। চলতি মাসের মধ্যে আরও কয়েকটি সংস্থা থেকে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হবে। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪০ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের একটি তহবিল ৯ কোটি ডলার ও অন্যান্য সংস্থা মিলবে আরও ১৩ কোটি ডলার। আইএমএফসহ মিলবে মোট ১৩১ কোটি ডলার। এসব ঋণের কারণে নিট রিজার্ভ বেড়ে ডিসেম্বরের শেষে দাঁড়াবে ২ হাজার ৪৮ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ হবে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ডলার। ডিসেম্বরের মধ্যে ছোট ছোট কিছু দেনা পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে বড় কোনো দেনা নেই। ফলে ডিসেম্বরের রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচ কম হবে। অন্যদিকে ঋণের অর্থ পাওয়া গেলে রিজার্ভ বাড়বে।

তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আকুর দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন নিট রিজার্ভ আবার ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে। একই সঙ্গে গ্রস রিজার্ভও কমে ২৪ বিলিয়নে নামতে পারে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বড় অংকের বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে না। ফলে ওই সময়ে রিজার্ভ আবার কমে যেতে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারিতে আবার আকুর দেনা পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমতে পারে।

এদিকে আইএমএফ রিজার্ভের যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রিজার্ভ কমবে। আগামী জুনে গ্রস রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে, যা এখনকার চেয়ে ৩৩ কোটি ডলার কম। অর্থাৎ ঋণ পেলেও মধ্যমেয়াদে রিজার্ভ বাড়ছে না। বরং কমছে।

এদিকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের চাপ এখনও রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে আগামী জুনের মধ্যে। এছাড়া আগামী বছরে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সব মিলে ২০২৪ সালে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। এর সঙ্গে আমদানি ব্যয়ও বাড়তে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চালসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বাড়বে কম, সে তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়বে বেশি। তবে আগামী বছরে রপ্তানি আয় বাড়বে কম, আমদানি ব্যয় বাড়বে বেশি। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতিও বেড়ে যাবে। চলতি হিসাবের ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বছরেও ডলারের সংকট কাটবে না। বৈদেশিক মুদ্রার সার্বিক হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি না কমলে রিজার্ভ বাড়বে না। ফলে মধ্যমেয়াদে রিজার্ভ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আইএমএফের হিসাবে ২০২৫ সালে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করবে।

এদিকে আইএমএফের অর্থ ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদনের পরদিনই ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের দাম আরও ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা রোববার থেকে কার্যকর হবে। যদিও নির্ধারিত দরে ব্যাংকে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে খুবই কম।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ডলারের দাম বাড়ার কারনে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। শীতে প্রবাসীরা দেশে আসে। এ কারণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। এছাড়া মার্চে রোজার ঈদ ও মে মাসে কুরবানির ঈদ এই দুই সময়েও রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। ইউরোপের মন্দাও কাটতে শুরু করেছে। ফলে রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/751529