১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:২৮

গ্রামে ২৮৮৯ জনের জন্য এক চিকিৎসক

 

দেশে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা এক লাখ ৭৯ হাজার ১৬০। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে বসবাসরত সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৫৭ জন। বিপরীতে গ্রামে ১১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৩৯ হাজার ১০৩ জন। এই হিসাবে শহরের ৩৯৩ জন মানুষের জন্য একজন চিকিৎসক, আর গ্রামের দুই হাজার ৮৮৯ জন মানুষের ভাগে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর (বিবিএস) এক সাম্প্রতিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনজন নার্স ও পাঁচজন টেকনিশিয়ান থাকা উচিত। প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ২৩ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। সেই হিসাবে প্রতি হাজারে অন্তত দুজন চিকিৎসক প্রয়োজন।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তথ্য মতে, দেশে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে তা অনেক কম। কারণ অনেক চিকিৎসক সেবায় যুক্ত নন, অনেকে অবসর নিয়েছেন, আবার অনেকে বিদেশে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের সংখ্যা কম থাকায় শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে।

এতে অনেক মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে অথবা তারা প্রয়োজনের সময় সেবা পাচ্ছে না। আবার সেবা পেলেও মানসম্মত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে একাধিকবার চিকিৎসকদের গ্রামাঞ্চলে সেবা দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহেদ মালেক। এমনকি চিকিৎসকদের গ্রাম থেকে শহরে বদলি হওয়ার প্রবণতা এবং লবিংয়ের জন্য একাধিকবার শাস্তির হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এর পরও চিকিৎসকদের গ্রামমুখী করা যায়নি।

বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত বলছে, সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৪২৪। অর্থাৎ সারা দেশের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক ঢাকা বিভাগে। ঢাকা বিভাগের মোট চিকিৎসকের ৮৮ শতাংশের বেশি রয়েছে শহর এলাকাতেই। আর গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ১১.৭৬ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৯৮৮ জন আর শহরে ৮২ হাজার ৪৩৬ জন।

বিবিএস বলছে, ঢাকা বিভাগের পর সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে চিকিৎসক রয়েছে ২৮ হাজার ৮০ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খুলনা বিভাগে চিকিৎসক রয়েছে ১২ হাজার ৩১৯ জন। রংপুর বিভাগে ১০ হাজার ৮০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে সাত হাজার ৫৯৯ জন, বরিশাল বিভাগে পাঁচ হাজার ৫৪০ জন চিকিৎসক রয়েছে। সবচেয়ে কম চিকিৎসক রয়েছে রাজশাহী বিভাগে, মাত্র চার হাজার ৯৫৩ জন।

জানতে চাইলে চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা খাতা-কলমে যে চিকিৎসকের সংখ্যা জানতে পারি, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক কম। প্রাপ্ত সংখ্যার মধ্যে কিছু চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁরা পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন। আবার কিছুসংখ্যক চিকিৎসক রয়েছেন যাঁরা বিদেশে শিক্ষার জন্য গেছেন।’

ডা. লিয়াকত আলী আরো বলেন, দেশের চিকিৎসা খাতে আরেকটি ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে সেবিকার সংকট ও টেকনোলোজিস্ট সংকট। এই সংকট অধিকতর ভয়াবহ। দেখা যায় যে একটি গ্রামে হাসপাতালে একজন চিকিৎসক থাকলেও সেখানে সেবিকা পাওয়া যায় না, টেকনোলোজিস্ট থাকে না। এর ফলে রোগী সঠিক সেবা পায় না।

প্রকৌশলী লাখের ওপরে

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিএসসি প্রকৌশলী বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী রয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ১৯৬ জন। অর্থাৎ প্রতি হাজার মানুষের জন্য প্রকৌশলী রয়েছে ১.৩১ জন। আর গ্রামাঞ্চলে প্রকৌশলী রয়েছে ৬০ হাজার ২৮২ জন। অর্থাৎ প্রতি দুই হাজারের জন্য একজন করে প্রকৌশলী রয়েছে। শহরে প্রকৌশলী রয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮১৪ জন ও গ্রামে প্রকৌশলী রয়েছে তিনজন।

ঢাকা বিভাগে প্রকৌশলীর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার ১২। মোট প্রকৌশলীর ৫৪ শতাংশ ঢাকা বিভাগেই। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের গ্রামাঞ্চলে প্রকৌশলী রয়েছে ১৮ হাজার ১৫ ও শহর এলাকায় এক লাখ এক হাজার ৯৯৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রকৌশলী রয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৫ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খুলনা বিভাগে প্রকৌশলী ১৫ হাজার ২৪০ জন। আর রংপুর বিভাগে প্রকৌশলী ১১ হাজার ৮৬৫ জন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে প্রকৌশলী রয়েছে আট হাজার ৬৭৩ জন। বরিশাল বিভাগে প্রকৌশলী রয়েছে সাত হাজার ৬৮২ জন। সবচেয়ে প্রকৌশলী রয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে প্রকৌশলী রয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯ জন।

 

ঢাকা বিভাগে পিএইচডিধারী বেশি, বরিশালে কম

বিবিএস বলছে, দেশে এখন পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৭০৪। পিএইচডিধারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫১৭। নারী আছে ১৪ হাজার ১৮৭ জন। পিএইচডিধারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, ৩০ হাজার ১৬৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে সাত হাজার ১৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে চার হাজার ১৬৪, খুলনা বিভাগে দুই হাজার ৯৩৮, রংপুরে দুই হাজার ১২০, ময়মনসিংহে দুই হাজার ৩৯, সিলেটে এক হাজার ৯৯০ এবং বরিশাল বিভাগে এক হাজার ১৪৩ জন পিএইচডিধারী রয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/12/13/1345136