১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০৮

পেঁয়াজের দাম আরো বেড়েছে

 

ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১২০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা পেঁয়াজের সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে দেশি নতুন ও পুরাতন পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতেই ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আগে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। গত সফতাহে ভালো মানের দেশি পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে যা এখন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। যা গতকাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সব মিলে দেশের বাজারে আবারও ঝাঁজ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ। ১৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার খবর আসে শুক্রবার। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। মাত্র একরাতের ব্যবধানে শনিবার সকালে রাজধানীর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এরপরের তিন দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে গেলো।

এক্ষেত্রে বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাফত পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এতে নতুন করে বাড়ছে দাম।

তালতলা বাজারে এক বিক্রেতা বলেন, শুক্রবার যে মানের ভারতীয় পেঁয়াজ রাজধানীর শ্যামাবাজারে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকায়। এ দাম গতকালের থেকেও ২০ টাকা বেশি।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তাই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তাই সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সাময়িক বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেলে দাম আবার কমে যাবে। পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। এমনিতেই বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। নিষেধাজ্ঞার এ খবরে দাম আরও বাড়ছে।

প্রতি মাসের বিক্রয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৬ ডিসেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এ দফায় অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রির কথা ছিল সংস্থাটির। তবে ডিলারদের পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে না টিসিবি। ফলে উষ্মা প্রকাশ করছেন সুবিধাভোগীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের মতো চিনিও সরবরাহ পাননি অধিকাংশ ডিলার। ফলে শুধু চাল, ডাল ও তেল বিক্রি করছেন তারা। বাজারে যেখানে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা কেজি, সেখানে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির কথা থাকলেও না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক ফ্যামিলি কার্ডধারী ক্রেতা।

যদিও ডিসেম্বর মাসে টিসিবির কার্ডধারী একজন ক্রেতার সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল অথবা কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান), পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ ও এক কেজি চিনি কিনতে পারার কথা।

রামপুরার জামতলা এলাকায় কার্ডধারী ক্রেতা বলেন, শুনলাম পেঁয়াজ দেবে। সেজন্য সকাল সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন দেখি পেঁয়াজ নেই। কয়েক মাস চিনিও দেয়নি। যখন যেমন মর্জি তেমন চলছে।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, পেঁয়াজ সরবরাহ নেই। শুধু ট্রাকসেলে পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরের নিয়মিত পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে পেঁয়াজ দেওয়া যাচ্ছে না। মজুত সাপেক্ষে টিসিবি পণ্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে। টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসা সাপেক্ষে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত কিছু মজুতদারকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। সারাদেশে বাকি মজুতদারদেরও চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। এসব মজুতকারীকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অধিদফতরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ভোক্তার ডিজি বলেন, এরই মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। আগামী সফতাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির পেছনে জড়িত কিছু মজুতাদারকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বাকি মজুতদারদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। খাতুনগঞ্জ ও শ্যামবাজারে কারা পেঁয়াজ লুকিয়ে রেখেছিল এবং কীভাবে গুদামে সাজানো পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেলো তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ও বর্তমান সঙ্কট হতে উত্তরণের জন্য আপাতত বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এসময় কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম না বাড়ানোর জন্যও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

মাহবুবুল আলম বলেন, নিন্মবিত্ত হতে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য হলো পেঁয়াজ । নিজেদেরক্ষুদ্র স্বার্থে যারা দেশের সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলেছেন তারা কোনোভাবেই দেশের ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রত্যাশা করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ ছিল না। ভারত পেঁয়াজ মার্চ মাস পর্যন্ত রফতানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাওয়া আমাদের সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীর অসৎ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।

হঠাৎ করে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। ভোক্তা অধিকার অধিদফতর এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে। তারা জরিমানা করেছে। যে কোনো কিছু হলেই দাম বাড়িয়ে দেওয়ার যে মানসিকতা এটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমেও যদি রিপোর্টিং হয় তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। তবে পেঁয়াজের দাম সহসা কমে যাবে। কারণ এক সফতাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করবে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, পেঁয়াজ নিয়ে তেলেসমাতি শুরু হয়েছে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও। ভারতের রফতানি বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে আগুন উঠে পেয়াজের দামে। পাইকারী, খুচরা সর্বত্র একই অবস্থা। নগর থেকে শুরু করে পাড়া গায়ের মুদির দোকানেও পেঁয়াজের দামে বেসামাল ঝাঁঝ। অথচ খুচরা দোকানীরা ৫০ টাকার ভেতরেই পেঁয়াজ কিনে রেখেছিল, কিন্তু দাম বাড়ার সাথে সাথে চড়া মূল্যে বিক্রি শুরু করে তারা। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই অনৈতিক পন্থা অবলম্বনে সামান্যতম বিবেকের পরিচয় দেয়নি। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘আগামী সাতদিন পেঁয়াজ বর্জন’ শীর্ষক ইভেন্ট খোলা হয়েছে। এ ইভেন্টে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। ক্রমেই বেড়ে চলেছে এর সংখ্যা।

এরকম মুহূর্তে সিলেটে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করতে জেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠক করেছে সোমবার। দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে গতকাল বিকেলের মধ্যে স্থানীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসনকে অবগত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত দামে সিলেট পেয়াঁজ বিক্রি না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। এমন করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। বৈঠকের পর সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সালেহ মো. হুমায়ূন কবির বলেন, অনুষ্ঠিত বৈঠকে সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, সিলেটের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের তদারকি অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক দামে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে, আমদানিকৃত পেঁয়াজের মূল্য বৈঠকে নির্ধারিত না হলেও দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকার বেশি বিক্রি না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় তিন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সোমবার দুপুরে শহরের সাহেব বাজার কাঁচাবাজারে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় মোট ৩ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মাসুম আলী।

অভিযান শেষে তিনি বলেন, মূল্য তালিকা না টাঙ্গিয়ে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে তিন ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সবাইকে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য প্রকাশ্যে টাঙ্গিয়ে দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত লাভে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এছাড়া দাম বৃদ্ধির খবরে অতিরিক্ত পেঁয়াজ ক্রয় না করে, ভোক্তাদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ক্রয় করার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ বাজার এলাকায় যৌথভাবে এই অভিযান চালানো হয়।
এ সময় স্থানীয় একটি দোকানে ক্রয় ও বিক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সকল ক্রয় ও বিক্রয়ের ভাউচার সংরক্ষণসহ মূল্য তালিকা সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালমান রনি এবং মেহেদী হাসান যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আব্দুস ছালাম খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্তকতামূলকভাবে এই অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় বাজার তদারকি করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িদের যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। অভিযানে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. জিল্লুল বারীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজের ভোক্তা অধিকারের অভিযান শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন পেঁয়াজ বাজারের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অভিযানের সময় ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক। পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতারবা ঝাঝ কমতে জো ভোক্তাঅধিকারের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

গতকাল শহরের হাজী শরিয়াতুল্লাহ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দিনভর অভিযান অব্যাহত ছিল। ২/৪ দিন আগে আগে যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০/৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে সেই পেঁয়াজের দাম এক লাফে দুই রাতের মধ্যে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশী দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ভোক্তা অধিকার গত শুক্রবার ও শনিবার অভিযান শুরু করেন।

সোমবার পেঁয়াজ বাজারের গিয়ে দেখা যায়, কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমে আসছে ৪০/৫০ টাকা। কি আজব বাজার। ক্রেতা মো. মকিম ফকির ইনকিলাবকে বলেন, ডাণ্ডা পড়লে সবাই ঠাণ্ডা হয়ে যায়। পাশাপাশি শরীতুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী নেতা মো. খায়রুজ্জামান লাবলু ইনকিলাবকে বলেন, ফরিদপুরের জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ অসাধু ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক। তিনি বাজার অভিযানে নামার ২ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমছে ৫০ টাকা।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরায় পেয়াজের আড়ত ,খাবার হোটেলে ও ফলের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। গতকার সকাল ১১টায় শহরের একতা কাঁচাবাজারের পাইকারী আড়তে যৌথ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার । জেলায় দেশি নতুন পেয়াজের পাইকারী বিক্রয় মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ১১০ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি করায় এবং মূল্য তালিকা না রাখায় দুই ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাগুরা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান জানান, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বেশি দামে পেয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবরে অভিযান চালানো হয়। এ যৌথ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. সাদ্দাম হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) , এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজী রবিউস সারোয়ার, মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, সহকারী পরিচালক, ভোক্তা অধিকার, মাগুরা এবং জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম ও মো. আলমগীর হোসেন ।

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, সারাদেশের মত বাগেরহাটেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে খুচরো বাজারে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে গত রোববার বিকেলে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর। অভিযানের খবরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম নেমে আসে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। বেশিরভাগ দোকানি ক্রয় মূল্যের পরে কেজি প্রতি ১০ টাকা লাভে পিয়াজ বিক্রির অঙ্গিকার করেন।

ক্রয় মূল্যের পরে ৩০ থেকে ৬০ টাকা লাভে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রির অপরাধে ৩ ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর, বাগেরহাটের সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার ভোমরায় ভারতীয় পেঁয়াজ মজুদের দায়ে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিককে পেঁয়াজ মজুদ না করতে সতর্ক করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমনা আইরিনের নেতৃত্বে ভোমরা স্থলবন্দরে কয়েকটি পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করা হয়। সাতক্ষীরার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, সঙ্কট না থাকলেও বাজারে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ভোমরা স্থলবন্দরে পেঁয়াজ মজুদ করছেন, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের যৌথ অভিযান চালানো হয়। এসময় মজুদের সত্যতা পেয়ে আখি ট্রেডার্সের মালিক আমির হোসেনকে ২০ হাজার টাকা, এস আর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মারুফ হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা, আজাদ ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার তাফসিরুল আলমকে ৩০ হাজার টাকা ও রাফসান ট্রেডার্সের ম্যানেজার দীপক কুমার সরকারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদিকে দাম আর না বাড়লেও বাজারে মিলছে না পেঁয়াজ। অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বেশি দামে বিক্রি করলে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। অপরদিকে, ভোমরা স্থলবন্দরে গত তিনদিনে এক ট্রাক পেঁয়াজ ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার ইনামুল হক।

কেশবপুর (যশোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কেশবপুরের বাজারগুলোতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপুরে কেশবপুর শহরের কাঁচা বাজারে পেঁয়াজের দোকানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন উক্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগে দুই ব্যবসায়ী জিয়ার রহমানকে ৪ হাজার টাকা ও হাসান কবিরকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন বলেন, বাজারে কিছু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ দাম বাড়িয়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি শুরু করছে খবর জানতে পেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি এবং দুই জন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার খবর জানতে পেরে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কমিয়ে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করন।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করেছে চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুর থেকে ৩টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানার নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুবসহ চুনারুঘাট উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের আসামপাড়া, রাজার বাজার, রানিকোর্ট, চুনারুঘাট পৌরসভার বিভিন্ন হাট বাজার পরিদর্শন করা হয়। এ সময় প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো এবং অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজসহ পণ্য বিক্রি না করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দর-দামের খোঁজ-খবর নিয়ে মুদির দোকানীকে সতর্ক করে দেন। চুনারুঘাট পৌরসভার মধ্য বাজারে পেঁয়াজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় আব্দুল মালেককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনী দক্ষিণ বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে বেশি দামে পেয়াজ বিক্রি এবং মূল্য তালিকা না থাকায় ‘হক এন্ড সন্স’কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে এবং সেই সাথে খগপতি ভান্ডারকে ২৮৫ বস্তা পেয়াজ পাইকারি ১১৬-১২০ টাকায় বিক্রির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ও মুল্য তালিকা প্রদর্শন করে বিক্রি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও হক এন্ড সন্সকে পাইকারি প্রতি কেজি ১১৬ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং খুচরা বাজারে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানদয়কে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। অভিযানে সহযোগিতা করেন জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. শওকত আলী এবং চৌমুহনী পুলিশ ফাড়ির একটি টিম। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গোদাগাড়ীতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বৃদ্ধি শিরোনামে সংবাদ দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম গোদাগাড়ী বিভিন্ন বাজরে অভিযান শুরু করেন। শুক্রবার রাতে ১২০/১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সবাইকে ৯৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করার নির্দেশনা দেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে জনসাধারনের কাজে ১/২ কেজি করে বিক্রি করান। স্থানীয় গরীব মানুষ ভীড় করে মহিশালবাড়ী বাজরের সৈয়েবের দোকানে সবচেয়ে পেঁয়াজ ক্রয় করেন। কম দামে মানষ পেঁয়াজ ক্রয় করতে পেরে দারুণ খুশি। এদিকে এভাবে পেঁয়াজ কম দরে বিক্রি করার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পরেই রেলবাজার, কাঁকনহাট, রাজাবাড়ী, রেলগেট, সিএন্ডবি, পিরিজপুরসহ বিভিন্ন স্থানের দোকান মালিকগণ দোকানে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। কোন কোন দোকান মালিক পেঁয়াজের বস্তা অন্যত্র দ্রুত সরিয়ে ফেলেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/623203