১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০৫

যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ স্যাংশন ইস্যুতে পোশাক মালিকরা

স্যাংশন ইস্যু অবশ্যই আমলে নিতে হবে

 

শ্রম অধিকার নিয়ে সমপ্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি নবায়ন না করার হুমকি প্রসঙ্গে ভীত নন বলে জানিয়েছেন পোশাক খাতের মালিকরা। তবে তাদের স্যাংশন ইস্যুকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। পশ্চিমা দেশ থেকে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে সেটি হবে রাজনৈতিক কারণে, শ্রমিক ইস্যুতে নয়। তাই এ সংকট বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।

সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা এ মন্তব্য করেন। 

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন শ্রম বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজিএমইএ’র পরিচালক এ এন সাইফুদ্দিন, শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিন, শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি এমন খারাপ অবস্থানে নেই, যে জন্য স্যাংশন দিতে হবে। যদি দেয়া হয়, সেটা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে দেয়া হবে। শ্রম অধিকারের কারণে নয়। ফলে তা কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। মালিকপক্ষ বা শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে (সমাধান) সম্ভব নয়। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞায় ভীত নই।

কারণ আমরা এমন কিছুই করিনি যেসব কারণে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। আইএলও কনভেনশনের ১০টির মধ্যে ৮টি পূরণ করেছি। বাংলাদেশে এমন অবস্থা নেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে। এরপরও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। রাজনৈতিক কারণে হলে তা অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ববান শ্রমিক সংগঠন বা নেতা হলে তিনি কারখানার ক্ষতি করতে পারেন না। অনেক পক্ষ আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও ভয় কাজ করে মালিকপক্ষের মধ্যে। ট্রেড ইউনিয়ন মানেই যখন তখন কাজ বন্ধ করে দেবে সে ধরনের ইউনিয়ন নিয়ে আমরা ভীত। তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল না। তাহলে কারা ভাঙচুর করলো সেটা দেখতে হবে। 

বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের সদস্য ও অর্থনীতিবিদ মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে কারখানায় ভয় আছে। শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই শ্রমিক হতে হবে, তাহলেই তিনি শ্রমিকের সমস্যা বুঝবেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি-ভিত্তিক কোনো পেনাল্টি হয়তো দেয়া হতে পারে। তিনি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।

ফজলে শামিম এহসান বলেন, শ্রম বিষয়ে বর্তমানে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছি। আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকেও ভালো আছি। ক্ষতিপূরণের দিক থেকে আমরা উন্নত দেশের মতো অবস্থায় আছি। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মনে ভয় থাকে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সেভাবে নার্সিং করা হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সেক্টরে শ্রমিক নেতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। তাদের একটা সেক্টর বাঁচাতে কাজ করে, আর একটা আছে বাইরে থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে। শ্রমিক নেতা মানে দাবি-দাওয়া না, কারখানাকেও এগিয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের যে আইনটার কারণে আমাদের ভয় সেখানে দুইটা দিক আছে। একটা পর্দার সামনে অন্যটি পর্দার বাইরের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এখন যে পরিস্থিতি আছে সেটা রাজনৈতিক। এখানে কূটনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারকে এখানে উদ্যোগ নিতে হবে।

শ্রমিক নেতা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যবসা ধরে রাখতে হলে তাদের মেমোরেন্ডাম বিবেচনায় নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সামপ্রতিক আন্দোলনে চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। এ হত্যাকাণ্ডের কেন তদন্ত হলো না, কেন বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো মজুরি বাস্তবায়ন। বিকেএমইএ-বিজিএমইএ কঠোর মনিটরিং না করলে এ বেতন পাবে না। আগামীর পথচলা সুন্দর করতে হলে অবশ্যই আমাদের আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ে অনিয়মের কারণে ট্রেড ইউনিয়ন ভালো অবস্থানে নেই। শ্রমিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটাও ভাববার বিষয়। মালিকপক্ষ বলছে- শ্রমিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাহলে আমার ৭ জন আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন। তারা তো আন্দোলনে ছিলেন না।

শ্রমিক নেতা ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, যারা স্যাংশন দিতে চান তারা আইএলও কনভেনশনের ক’টি রেটিফাই করেছেন? তারা কোর কনভেনশনের বেশির ভাগই র‌্যাটিফাই করেননি। তারা যদি বলে তোমার (বাংলাদেশের) শ্রমমান উন্নত নয়, তাহলে বলতে হবে শ্রমমান নয়, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। তিনি বলেন, এতে ভীত হওয়ার কারণ নেই।

এর আগে গত ২০শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মন্ত্রী (বাণিজ্য) সেলিম রেজা একটি চিঠি দেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে। ওই চিঠিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম ইস্যুর অজুহাতে স্মারকলিপিতে বর্ণিত যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। এই স্মারকলিপি বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শ্রম অধিকারের অজুহাতে ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। 

https://mzamin.com/news.php?news=87880