১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০১

তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার ইঙ্গিত

 

ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে কম, ঋণ বেড়েছে বেশি। ফলে সার্বিকভাবে আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়েছে বেশি। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় চাপ আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে কম, কিন্তু ঋণ বেড়েছে বেশি। এতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও তারল্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেশের ব্যাংক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর। কিন্তু এ খাতেও আমানতের প্রবৃদ্ধি কম। শুধু বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবাহ বেশি। সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের সেপ্টেম্বরের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়েছে দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় চাপ আরও বাড়তে পারে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো যে আমানত সংগ্রহ করে তার পুরোটাই ঋণ হিসাবে দিতে পারে না। গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ঝুঁকি এড়াতে সাড়ে ৯ থেকে ১৭ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। আমানতের মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ১৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ আমানত হিসাবে রাখতে হয়। বাকি ৮৩ শতাংশ তারা বিনিয়োগ করতে পারে। একইভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের সাড়ে ৯ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। বাকি সাড়ে ৯০ শতাংশ তারা বিনিয়োগ করতে পারে। যে কারণে পুরো আমানত ব্যাংকগুলো ঋণ হিসাবে বিতরণ করতে পারে না। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আমানতের প্রায় পুরোটাই ঋণ হিসাবে বিতরণ করে ফেলছে। এতে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ আমানত রাখতে ধার করতে হচ্ছে। যা বাজারে তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে আমানত বেড়েছিল দশমিক ১৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছিল ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ আমানত প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে, এদিকে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে ঋণ প্রবাহ কমাচ্ছে।

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। কিন্তু এসব ব্যাংকে আমানত প্রবাহ কমেছে। আলোচ্য সময়ে বিদেশি ব্যাংকে আমানত বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকে। সরকারি ব্যাংকে বেড়েছে দশমিক ৮৪ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ আমানত বেড়েছে। ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে সরকারি খাতের আমানত কমেছে দশমিক ২৭ শতাংশ ও বেসরকারি খাতের আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। সরকারি খাতের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় আমানত প্রবাহও কমেছে।

এদিকে সরকারি ব্যাংকে ঋণ বেড়েছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে দশমিক ৪২ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকে দশমিক ৮২ শতাংশ ও বেসরকারি ব্যাংকে ২ শতাংশ। ইসলামি ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। কেবলমাত্র বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ছাড়া বাকি সব ব্যাংকেই তারল্য ব্যবস্থাপনা বড় চাপে পড়তে পারে।

এদিকে ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এদিকে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার নিচ্ছে। এর বাইরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কলমানি ও স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের আওতায়ও প্রতিদিন ধার নিচ্ছে। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছে ১৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সোমবার কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/750371