১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৫৬

রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর শেষ হওয়ার পথে ভূমিধসের আশঙ্কা

 

অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে রাজধানী ঢাকা নগরী প্রতিনিয়ত বর্ধিত হচ্ছে এবং এর বাসিন্দার সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে ঢাকায় পানির চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। তাই রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে আশঙ্কাজনক হারে। দখল-দূষণে নদী, খাল, বিল ধ্বংস করা ও পানির অপব্যবহার এর অন্যতম কারণ। রাজধানী ঢাকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের দৈনিক প্রয়োজনে প্রায় ৭০ শতাংশ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। শুধু ঢাকা ওয়াসাই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে। ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। তাই ঢাকায় পানি সংকট ও ভূমিধসের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এর জন্য পানির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। ভূ-বিজ্ঞানীরা বলেন, সোমালিয়ার মোগাদিসু এবং মিশরের টান্তা শহরের পরে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াসার ১ হাজার পাম্প ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা অন্তত ২ হাজার গভীর নলকূপ ও আরও কয়েক হাজার অননুমোদিত গভীর নলকূপ দিয়ে প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। আর এই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পলির ধরনের ওপর নির্ভর করে বৃষ্টি বা বন্যার পানি ১০০ মিটার বা ৩২৮ ফুট গভীরে যেতে অন্তত ১০০ বছর এবং ৩০০ মিটার বা ৯৮৪ ফুট গভীরে যেতে প্রায় ১ হাজার বছর সময় লাগে। যেভাবে পানি উঠানো হচ্ছে এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামানো বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও তা আবার ভরার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জটি সামনে আসে তা হলো, মানুষ মাত্র কয়েক সেকেন্ডে যে পানি তুলে ফেলতে পারে তা প্রাকৃতিকভাবে পূরণ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। রাজধানীতে ভবন বৃদ্ধি ও কংক্রিটের অবকাঠামো বাড়তে থাকা এবং ক্রমশ জলাশয় বিলুপ্ত হতে থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় ভরার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। মূলত ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা ও আধুনিক প্রযুক্তিগত কারিগরি জ্ঞানের অভাবে আজও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়নি। জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১০টি দেশ স্থান পেয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রাজধানীতে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহে গত এক যুগে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় ঢাকা ওয়াসা। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনাও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো ১০-১২ বছরের ব্যবধানে রাজধানীতে সবমিলিয়ে আট হাজার গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বসিয়েছে প্রায় সাত হাজার গভীর নলকূপ। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসাও দিন দিন বাড়াচ্ছে এ নলকূপের সংখ্যা। মেকিং দ্য ইনভিসিবল ভিসিবল শিরোনামে জাতিসংঘের বৈশ্বিক পানি উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পানি উত্তোলনকারী বাকি ৬ দেশ হলো চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্ক। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ৭টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের ৬০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে থাকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৯৯ শতাংশ সুপেয় পানির উৎস হচ্ছে মাটির নিচে সঞ্চিত পানি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সবার সঠিক ধারণা নেই। ফলে এর সঠিক মূল্যায়ন হয় না এবং প্রায়ই এই প্রাকৃতিক সম্পদ অব্যবস্থাপনা ও অপব্যবহারের শিকার হয়।

পানির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণসহ পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় প্রথম যে সংকট তৈরি হবে সেটা হলো আমরা শিগগির চরম পানি সংকটে পড়বো। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুপেয় পানির সংকট শুরু হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভে থাকা টেকটনিক প্লেটের অসামঞ্জস্য তৈরি হলে ভূমি দেবে যাওয়া বা অবনমন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নদী-নালা শুকিয়ে যাবে। দেশ পুরো মরুকরণের দিকে চলে যাবে। হারিয়ে যাবে অনেক প্রাণী। কোনো এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি না থাকা মানে সেই এলাকাটাই ধ্বংস হয়ে যাওয়া। জাতিসংঘের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশ বছরে ৩০ ঘন কিলোমিটার এলাকা থেকে পানি উত্তোলন করেছে এবং ৮৬ শতাংশ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে জানান, প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত ভূমির প্রাক্কলিত পরিমাণ ৩২ ঘন কিলোমিটার। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তোলন করা পানির প্রায় ৯০ শতাংশ সেচ কাজে এবং বাকি ১০ শতাংশ গৃহস্থালি কাজে ও শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মাল্টি-হ্যাজার্ড গ্রাউন্ডওয়াটার রিস্কস টু দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই ইন বাংলাদেশ। প্রতি বছরই আশংকাজনক হারে বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের হার, যেটি দেশের জলাধারগুলোর প্রতি মারাত্মক হুমকি এবং এটি একই সঙ্গে খরা ও দূষণের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।

সূত্রে জানায়, দূষণ ও দখলের কারণে ঢাকার চারপাশের নদী ও জলাশয়ের পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায়, নগরীর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার ঘরে ও শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা প্রায় ৭০ শতাংশ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। শুধু ঢাকা ওয়াসাই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে, যা দিয়ে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আকারের অন্তত ২০টি স্টেডিয়াম পূর্ণ করা সম্ভব। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, উত্তোলন করা এই পানির অন্তত ২৫ শতাংশই অপচয় হচ্ছে সরবরাহ প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে। সারাদেশে ১ হাজার ২৭২টি পর্যবেক্ষণ কূপের মাধ্যমে ৬০ বছর ধরে পানির পরিমাণ ও গুণমান পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তাদের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২ মিটার বা প্রায় ৭ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। কয়েক দশক আগেই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল পাউবো এবং গবেষকরা। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৩ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি নেমে যেতে পারে ১২০ মিটারে। কেননা, ওয়াসার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ সালে প্রতিদিন ৩৫ লাখ ঘনমিটার, ২০৩০ সালে প্রতিদিন ৪৩ লাখ ঘনমিটার এবং ২০৩৫ সালে প্রতিদিন ৫২ লাখ ঘনমিটার পানির চাহিদা থাকবে ঢাকায়। 

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৫ থেকে ২৪ শতাংশ ভূমি এলাকা উচ্চ পর্যায়ের আর্সেনিক, লবণাক্ততা ও ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার আশংকায় আছে। এ ছাড়াও, প্রতিবেদনে পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ উল্লেখিত সমস্যাগুলোয় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে আছেন। এই ৮৬ লাখ মানুষের মধ্যে ২২ লাখই দারিদ্রসীমার নিচে আছেন। রাজউক এর সাবেক চেয়ারম্যান ও গবেষক আর কে চৌধুরী তার এক গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, রাজধানীর নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়ায় তা পরিশোধন করে ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ছে তা অশনি সংকেত বলে বিবেচিত হচ্ছে। রাজধানীর পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিক থেকেও। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগের দূষিত পানি ভূগর্ভের শূন্য স্থানে প্রবেশ করে নাগরিক জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে। বাংলাদেশ যে পানির সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রধান কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ঘটনা। নদনদীর পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাসও এ বিপদের জন্য দায়ী। নদী দূষণ অবস্থাকে ভয়াবহভাবে বিপজ্জনক করে তুলছে। অস্তিত্বের স্বার্থে উজানে পানি প্রত্যাহার রোধে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে। নদনদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ও দূষণ বন্ধে নিতে হবে পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে কোথাও হেলাফেলা কাম্য নয়।

ভূগর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞ এবং পাউবো পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকার মাটির নিচে একটি বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা বিপর্যয়ের ধারণাই পাচ্ছি। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনার একটি আদর্শ নিয়ম হলো, পানি উত্তোলনের পরিমাণ কখনোই রিচার্জের পানির চেয়ে বেশি হতে পারবে না। ভূ-গর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ অসীম নয়। সরকারকে অবশ্যই জাতীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় এর ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরিসংখ্যান বিষয়ক জার্মান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুসারে, কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়েও ঢাকার জনঘনত্ব বেশি। কুতুপালংয়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ২৮ হাজার ৯৫৮ জন, যেখানে ঢাকায় এই সংখ্যা ৩০ হাজার ৯১১। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে পাউবোর পরিসংখ্যানে। ১৯৭০ সালেও ঢাকা শহরে ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফুট মাটির নিচেই পানি পাওয়া যেত। অথচ, ২০২৩ সালে ৭৩ মিটার বা প্রায় ২৪০ ফুটের আগে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নেমে যাওয়ায় একটি শূন্যস্থান চিহ্নিত করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। ভূতত্ত্বের ভাষায় যাকে বলে কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন। এই কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন’র বিস্তার ঢাকার কেন্দ্র থেকে আশেপাশের উপজেলা, যেমন: টঙ্গী, সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

গবেষকদের মতে, ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও আশার ব্যাপার হলো, বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের ভূগর্ভের বালির স্তরের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তা এখন পর্যন্ত বিপর্যয় ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলাধারের উপরের অংশের পুরু পলির স্তর বালির কণা পুনর্গঠন ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার চাপ সামলে নিতে পারছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, যখন ওয়াসা এবং অন্যান্যরা গভীর নলকূপের সাহায্যে ৩০০ মিটার বা ৯৮৪ ফুট গভীর থেকে পানি উত্তোলন করতে শুরু করবে তা হবে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ সতর্ক করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাদামাটির স্তরগুলো বালির স্তরগুলোর ঠিক বিপরীত আচরণ করে। কাদার স্তরে (যার পুরুত্ব ৬০ ফুট পর্যন্ত) কোন অব ডিপ্রেশন তৈরি হলে ভূমিধস হতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই মিঠা পানির শূন্যতায় পড়তে পারে ঢাকা এবং এখানে জাকার্তার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলনের ফলে জাকার্তা এখন বিশ্বের দ্রুততম ডুবন্ত মহানগর হিসেবে বিবেচিত। এমনকি ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলনের ফলে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীর এক-তৃতীয়াংশ ২০৫০ সালের মধ্যে ডুবে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ ছিল ৫১৯টি। ২০২১ সালের জুনে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩৪টিতে। একসময় ঢাকা শহরে ভূগর্ভের যেখানে ১৫০-২০০ ফুট গভীরেই পানি পাওয়া যেত, আজ সেখানে ১২০০ থেকে ১৫০০ ফুট গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। ফলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরিত্যক্ত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের নলকূপ।

https://www.dailysangram.info/post/543041