৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:৩৪

তারল্য সংকট আরও বেড়েছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে

 

নামে-বেনামে ঋণ বিতরণের খবর প্রচারিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। যে পরিমাণ আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে বিপরীতে নতুন করে সেই পরিমাণ আমানত না আসায় তারল্য সংকটে ভুগছে এসব ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তারল্য কমেছে ৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এসব ব্যাংকের তারল্য কমেছে ৯ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বা ৫৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর আগের প্রান্তিক জুন শেষে তারল্যের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের প্রান্তিকের তুলনায় তারল্য কমেছে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ।

 

তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কিছুটা বেড়েছে। এ সময়ে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক জুনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানত বেড়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক জুনের তুলনায় ১ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

আমানতের তুলনায় বেশি হারে ঋণ বিতরণ করায় এসব ব্যাংকের এডিআর রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) বেড়ে গেছে। আলোচ্য সময়ে এসব ব্যাংকের এডিআর রেশিও দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের প্রান্তিক জুনেও তা একই ছিল। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর এমন অবস্থা প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে যে লুটপাট দেখা দিয়েছে তা নজিরবিহীন। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এসব ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকিং খাতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আমানতকারীরাও ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমের অপপ্রচারে ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে অনেক গ্রাহক তাদের টাকা তুলে নিয়েছেন। এ ছাড়া ডলারে এসব ব্যাংকের বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য কিছুটা কমেছে। তবে এখন আবার গ্রাহকের তুলে নেওয়া টাকা ব্যাংকগুলোতে ফেরত আসছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে শিগগির এসব ব্যাংকের সংকট কেটে যাবে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে গ্রামাঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকগুলোর পূর্ণাঙ্গ শাখা বৃদ্ধি করা উচিত। সামাজিকভাবে লাভজনক হয় এমন শিল্পে বিশেষ করে কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় আরও বেশি বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে না। কারণ ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালায় সুদ নিষিদ্ধ। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ, ইসলামী ব্যাংকগুলো সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে সরকারের পক্ষে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা করা যেমন সম্ভব হবে তেমনি ইসলামি পুঁজিবাজারও তৈরি হবে।

দেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহ ব্যাংক ১ হাজার ৬৫৯টি শাখার মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ১১টি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ২৩টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫৩৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনা করছে।

https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/lastpage/44997