৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:৩১

মাঠপ্রশাসনে অসন্তোষ

 

মাঠ প্রশাসনে সারাদেশে ৪৯৫জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছে আসছেন। ৪৯৫জন ইউএনওর মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যে তাদের কর্মস্থলে কমপক্ষে এক বছর অতিবাহিত করেছেন। এর মধ্যে ১০০জন ২দুই বছর অতিবাহিত করেছেন এবং ১৮৮জন ৬ থেকে ৯ মাস কর্মস্থালে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে বদলি এবং পুলিশের সব থানার ওসিকে বদলি করতে ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে যেসব ইউএনও-ওসিরা এক বছর এবং ৬ মাস আগে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর তবদীর করে বদলি হয়েগেছেন সেই সব ইউএনও-ওসিরা বিপাকে পড়েছেন। মাঠ প্রশাসনে যেসব ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিরা কর্মস্থলে ২দুই বছর, দেড় বছর এবং ৬ মাস অতিবাহিত করেছেন তাদের তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিভাগীয় কমিশনাররা। ইতোমধ্যে ইউএনওদের তালিকা ইসিতে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার সকালে আসলে বিকালে বদলীর প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলে জানা গেছে। এদিকে জাতীয় নিবাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে হঠাৎ বদলীর কারণে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে।

গতকাল রোববার ইউএনওদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে বিভাগীয় কমিশনাররা। এদিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ডিএমপির ৫৩টি থানার মধ্যে ৩৩টি থানার ওসিদের বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের সব ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে বদলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইসি। একই দিনে পুলিশের সব থানার ওসিকে বদলির নির্দেশনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইসি। এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার অতিরিক্ত সচিব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ইনকিলাবকে বলেন এ বিভাগে মাঠ প্রশাসনে যেসব ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিরা কর্মস্থলে ২ দুই বছর, দেড় বছর এবং ৬ মাস অতিবাহিত করেছেন তাদের তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলির যে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি থাকতে কর্মকর্তাদের গণহারে বদলির এই উদ্যোগ নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের পরিকল্পনায় ধাক্কা দিতে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে ইউএনও ও ওসিরা গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করার পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য কাজ করছেন। গত বৃহস্পতিবার দেশের সব ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে বদলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইসি। একই দিনে পুলিশের সব থানার ওসিকে বদলির নির্দেশনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। কিন্তু বদলি কার্যকর হওয়ার পর নতুন জায়গাগুলোতে দায়িত্ব বুঝে নিতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইউএনওদের নিকটবর্তী জেলাগুলোতে বদলির কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অন্তত ছয়জন ইউএনও বলেছেন, তারা ভেবেছিলেন যে কিছু কারণে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অল্প কিছু কর্মকর্তাকে বদলি করা হতে পারে। কিন্তু এমন গণহারে বদলির বিষয়টি তারা কল্পনাও করতে পারেননি।

ঢাকা বিভাগের একজন ইউএনও বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনারদের বলতে শুনেছি যে নির্বাচনকালীন সময়ে বড় প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হবে না। তাই সব ইউএনও-ওসিদের বদলির নির্দেশে আমি হতবাক হয়ে গেছি। সপ্তাহদুয়েক আগে দুই নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ও পুলিশে বড় ধরনের রদবদল হবে না। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে উপজেলাগুলোতে কর্মরত ইউএনও আর ছয় মাসের বেশি সময় ধরে থানায় দায়িত্বে থাকা ওসিদের বদলির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছে ইসি। আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে এগুলো জমা দিতে হবে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের মোট ৪৯৫ জন ইউএনওর মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যে তাদের কর্মস্থলে কমপক্ষে এক বছর অতিবাহিত করেছেন। সাধারণত ইউএনওদের বদলির বিষয়টি নিয়ে কাজ করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। চারজন বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন, তারা নিজ নিজ বিভাগের ইউএনওদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। রাজশাহী বিভাগের একজন ইউএনও বলেন,›ইউএনওরা ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাদের নিজ নিজ উপজেলা সম্পর্কে ধারণা আছে। কিন্তু বদলির পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এস এম আলম ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ব্যাপারে সমিতি কোনো মন্তব্য করবে না।

রংপুর বিভাগের একজন পুলিশ সুপার ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্যই ওসিদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ আছে।› এ ব্যাপারে ঢাকার একটি থানার ওসির বক্তব্য, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো মানে হয় না। এত কর্মকর্তাকে ঝামেলায় ফেলানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, নতুন একজন ওসির ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে পরিচিত হতে ও এলাকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে ধারণা পেতেও কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। গণবদলির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সংসদ সদস্য পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে একই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ কারণেই। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গত শনিবার ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি ঢাকার বাইরে নির্বাচন কমিশনারদের সফরের সময় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসি সরকারের কাছে ইউএনও ও ওসিদের বদলি চেয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন অশোক কুমার দেবনাথ। এই বদলি সরকার চাইল, নাকি নির্বাচন কমিশন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‹নির্বাচন কমিশনই চেয়েছে।

গত শনিবার দুই জেলা প্রশাসককে বদলি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদার-ই-আলম মোহাম্মদ মাকসুদকে ময়মনসিংহে বদলি করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক করা হয়েছে। এর বাইরে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৩৩টি থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) বদলি করা হচ্ছে। একটি আদেশ ডিএমপি সদর দপ্তরে প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওসিদের বদলি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) একেএম হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ডিএমপির ৫৩টি থানার মধ্যে ৩৩টি থানার ওসিদের বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বদলির আদেশ আজকেই (রবিবার) পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই ৩৩টি থানায় নতুন ওসি যোগদান করবেন। দেশের সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বদলির প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বদলির কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।

https://dailyinqilab.com/national/article/621450