৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:৩০

‘সোয়াট যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অযোগ্য’

 

যুক্তরাষ্ট্র তার বার্ষিক সন্ত্রাস বিষয়ক রিপোর্টে বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে র‌্যাবের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকস ডিভিশন (সোয়াট) যুক্তরাষ্ট্রের  যেকোনো রকম সহায়তার অযোগ্য। লেহি আইনের অধীনে বিধিনিষেধের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় রিপোর্টে। উল্লেখ্য, লেহি ল’ বা লেহি সংশোধনী যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক আইন। বিদেশি যেসব নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী দায়মুক্তির সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদেরকে সামরিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বাধা দেয় এই আইন। সিনেটর প্যাট্রিক লেহির নামানুসারে এর নাম দেয়া হয়েছে লেহি আইন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশের পুলিশ ইউনিটগুলো সন্দেহভাজন কয়েক ডজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অন্য অংশগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। লঙ্ঘন করেছে মানবাধিকার। ২০২২ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর প্রকাশ করা হয় এই রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ), পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং র‌্যাব সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে।

এর মধ্যে সিটিটিসিইউ তদন্ত করে ২৭টি মামলা।

পরিচালনা করে ২৭টি অপারেশন। গ্রেপ্তার করে ৬১ জনকে। এর বেশির ভাগই ঢাকায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিটি পুলিশ অনেকগুলো ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়। গ্রেপ্তার করে কিছু মানুষকে। অন্যদিকে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পারফরমেন্স বজায় রাখে এটিইউ। তারা ২৭টি তদন্ত সম্পন্ন করে। পরিচালনা করে ৪২টি অপারেশন। এতে গ্রেপ্তার করা হয় ৪৫ জনকে। এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাহিনী। তারা সবাই আলাদাভাবে কাজ করে। 

ওই রিপোর্টে ২০২২ সালে বাংলাদেশের একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনার কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে, অক্টোবরে ‘জেএএইচএস’-এর প্রশিক্ষণ শিবিরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাবের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, জেএএইচএস ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ নামের একটি জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনকে সহযোগিতা করেছিল। কর্তৃপক্ষ বছরের বাকি সময় জুড়ে কয়েক ডজন জেএএইচএস সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে। 

২০২২ সালের ২০শে নভেম্বর জঙ্গিরা বাংলাদেশি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মইনুল হাসান শামীম এবং আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেয়। ঢাকার একটি আদালত থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল-ইসলামের ২০ জন সন্দেহভাজন সদস্যের বিরুদ্ধে পরিকল্পনায় সহায়তা করার দায়ে মামলা করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। রিপোর্টে বলা হয়, মূলত ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনেই সন্ত্রাসবাদে যুক্ত সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার এবং আটক করা হয়। 

নিজের স্থল ও সামুদ্রিক সীমানায় টহল দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। দেশটি আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রী স্ক্রিনিং পদ্ধতি উন্নত করেছে। বাড়িয়েছে লোকবলও। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের অন্য বন্দরগুলোর নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ ঢাকায় নতুন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালে কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং উপযুক্ত উচ্চমানের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে। বিমানবন্দর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ উভয়ই বন্দর ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা উন্নত করতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহী ছিল।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে। বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করে। শিবিরগুলোতে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ আছে এবং বাংলাদেশি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রবাদের বিস্তারের আশঙ্কা জানিয়ে আসছেন। তবে ২০২২ সালে ক্যাম্পগুলো থেকে তেমন কোনো সন্ত্রাসী হুমকির তথ্য পাওয়া যায়নি। 
বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং বিষয়ক এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। ২০২২ সালে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। পুলিশ, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ এবং অন্যদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সন্ত্রাস দমন কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের মতে প্রক্রিয়াটি থেমে আছে।

https://mzamin.com/news.php?news=86590