১৮ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১০:১৬

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতি ওলট-পালট

সঙ্ঘাত মহামারী বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

 

জলবায়ু পরিবতনে ওলট-পালট প্রকৃতি। ভারসাম্য হারিয়ে একদিকে বৃষ্টি তো অন্য দিকে চলছে খরা। মাত্রাতিরিক্ত গরম, অসময়ে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী, ঝড় ও শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, নদীভাঙনসহ বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার কারণে সামনের সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে সঙ্ঘাত বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত তথ্য বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। চলতি বছর হচ্ছে এই দশকের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। চলতি মৌসুমে ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটে। এতে নানা ধরনের দুর্যোগ বেড়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন ঘটেছে। চলতি বছরে দফায় দফায় তাপপ্রবাহ, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, মৌসুমের শুরুতে বন্যা এগুলোই হলো তার প্রভাব। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহ, বন্যা, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগও তার ভয়াবহতা জানান দিচ্ছে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব গতকাল শুক্রবার নয়া দিগন্তকে বলেন, মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতি ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে সুমুদ্রের উচ্চতা। নষ্ট হচ্ছে ইকো-সিস্টেম। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জলাভূমি হচ্ছে মরুভূমি। এতে সবচেয়ে বেশি উপকূলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতির ক্রমাগত পরিবর্তন তাদের জীবিকায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের তীব্রতা, নদীভাঙন, নদীতে মাছ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বহু জেলেকে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে, যা একাধিক পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পাল্টে যাচ্ছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে ভয়াবহ বন্যার সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় যখন তখন ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মৃত্যু বাড়ছে। এতে করে আসছে বছরগুলোতে মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সঙ্ঘাত ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বাড়বে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক নয়া দিগন্তকে বলেন, এলনিনোর প্রভাবে সারা পৃথিবীতে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার দু’টি ব্যবস্থা (সিস্টেম) সক্রিয় হলে পৃথিবীতে ঝড়বৃষ্টি, শুষ্কতা বা খরা এবং শীতের প্রকোপ ইত্যাদি বেড়ে যায়। এর একটি হচ্ছে ‘এল-নিনো বা লা-নিনো’, আরেকটি হচ্ছে ‘ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন’ (এমজেও)। তার মতে, এভাবে উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে গাছপালা বিলীন এবং শস্য আবাদে চরম ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এর মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ভূ-পৃষ্ঠে পানির রিজার্ভার বাড়াতে খাল খনন, পুকুর খনন ও সংস্কার করা প্রয়োজন। সে সাথে গাছপালা বাড়ানো গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও মোকাবেলা সম্ভব হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/792302