১৮ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১০:১১

আটা, ময়দা ও চিনির দাম অস্বাভাবিক

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। একেক সময় একেক পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। নতুন করে আটা, ময়দা ও চিনির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আটার কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা এবং ময়দার কেজিতে সর্বোচ্চ ছয় টাকা দাম বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। শীতের আগাম সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম কমার সুখবর নেই। আগের মতোই চড়া শাক সবজি ও মাছের বাজার। অপরিবর্তিত রয়েছে বৃদ্ধি পাওয়া তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম। তবে শীছুটা কমেছে পেয়াঁজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে আটা ও ময়দার দাম  অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আটার কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা এবং ময়দার কেজিতে সর্বোচ্চ ছয় টাকা দাম বেড়েছে। ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গম আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বাজারে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

আটা ও ময়দার খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত বছর ইউক্রেন-রাশীয়া যুদ্ধ শুরু হলে অস্বাভাবিক দর বেড়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস আগে আটা-ময়দার দাম শীছুটা কমে আসে। প্রায় তিন মাস এক রকম স্থির ছিল দর। তবে সম্প্রতি আটা-ময়দার দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজি ওজনের আটার বস্তায় ২০০ আর ময়দায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। এতে বাজারে খোলা আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ এবং প্যাকেট আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা আটা ৪২ থেকে ৪৫ এবং প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা ময়দার কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে এখন খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৬ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ধরনের তথ্য দিয়ে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা আটার কেজিতে সাড়ে তিন এবং প্যাকেট আটার ১৪ শতাংশ দর বেড়েছে। একই সময় ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ৯ শতাংশ।

চালের বাজারেও দেখা গেছে, মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে প্রায় দুই টাকা। সঙ্গে এতোটা না বাড়লেও মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা। সংশীøষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমায় বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ছে। যদিও তথ্য বলছে, সরকারের গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। যে কারণে পাইকারি বাজারে একপক্ষের অভিযোগ- মিলারদের কারসাজির কারণেই মূলত চালের দামে উল্লম্ফন হয়েছে। মিল মালিকেরাই কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করেছে। বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০-৫২ আর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩-৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতি কেজি বি আর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা। আগে এ চালের দাম ছিল ৫৪-৫৬ টাকা। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। মাঝে দাম শীছুটা নিম্নমুখী হলেও এখন আবার বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, মানুষ বর্তমান দামের থেকে অর্ধেক দামে আলু শীনতে অভ্যস্ত। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এরমধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে সামান্য পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার কোন কোন দোকানে এ দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গত ১ নবেম্বর চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চিনি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক কমানো হয়। শীন্তু তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং এরমধ্যে দুই দফা চিনির দাম বেড়েছে।

এদিকে, ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও শীছুটা প্রভাব বাজারে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। খুচরা বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও শীছুটা কমেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশী বাজার এখন শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। এতে দামও শীছুটা কমছে। দুই-তিনটি ছাড়া বেশীরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। যেখানে দু-তিন সপ্তাহ আগেও সব ধরনের সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। তখন বেশীরভাগ সবজির কেজি ছিল ১০০ টাকার আশপাশে। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবচেয়ে কম দামে যে সবজিটি পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো পেঁপে। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আকারভেদে প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁপে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ছাড়া বাজারে আপাতত কমদামি সবজি খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিষ্টি কুমড়া, মুলা ও আলু। বেগুন গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে পটল, করলা, শসা, ঢেঁড়স, ঝিঙা ও ধুন্দল। এসব সবজি গত সপ্তাহের মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে। শীম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।  

দেশী আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। দেশী রসুনের কেজি ২২০ যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ টাকা। ইন্ডিয়ান রসুন ১৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। আর অপরিবর্তিত রয়েছে শুকনা লাল মরিচের দাম। গত সপ্তাহের মতোই ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুদি পণ্যের মধ্যে দেশী মসুর ডাল, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ ও ১২৫ টাকায়, যার দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা এবং ১১৫ টাকা। এংকর ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, ডাবলি ৬৮ টাকা, খোলা চিনিগুড়া চাল ১৩৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৬০-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭৫ টাকা, মোটা চাল ৫৪ টাকা, গুঁড়াদুধ ৭৮০ টাকা, তেল ১৭০ লিটার, ৫ কেজির বোতল রূপচাঁদা ৮০০ টাকা, পামঅয়েল ১৩৫ কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, মাঝারি রুই মাছ ২৫০-২৭০ টাকা, কাতলা মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় পাঙ্গাশ মাছ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা ও শীং মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট, মাঝারি, বড় ইলিশ মাছ যথাক্রমে ৯০০, ১২০০ ও ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ছোট কাচকি মাছ ৩০০ টাকা, মলা মাছ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছের দামও বেশ চড়া। প্রতি-কেজি বড় সাইজের সুরমা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, রূপচাঁদা আকারভেদে ৫০০-৮০০ টাকা, লাল কোরাল ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ব্রয়লারের কেজি ২১০-২২০ টাকা থেকে কমে দাম হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়। কক মুরগি ৩৪০ টাকা, দেশী মুরগি ৬০০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ টাকা কেজি এবং হাঁস ৬০০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, গরু ও খাশির গোশতের দামও। গরুর গোশত ৭৫০-৮০০ টাকা ও খাশীর গোশত ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

https://dailysangram.info/post/540966