১৭ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:৫৮

১৫ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ডলার

বৈদেশিক মুদ্রায় দেনার বোঝা বাড়ছে

 

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে গেল। গত ১৫ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর প্রকৃত রিজার্ভ কমেছে ১০৬ কোটি ডলার। এ সুবাদে প্রকৃত রিজার্ভ কমে নেমেছে ১৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে। ৩১ অক্টোবর যা ছিল ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয় ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার এ মজুদ যতই কমছে ততই আমদানি দায় পরিশোধে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে এলসির বকেয়া দায় দিন দিন বাড়ছে। সাথে বিদেশী এয়ার লাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রির বড় একটি অংশ তারা নিজ দেশে নিতে পারছে না। অপর দিকে বিদেশী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও বকেয়া দায় বেড়ে গেছে। শুধু ডলার সঙ্কটের কারণে বিপিসি তার বকেয়া দায়ের ১০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে পারছে না। এর মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের ৬৭০ মিলিয়ন ডলার বা ৬৭ কোটি ডলার এবং পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বাবদ বকেয় ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলার। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। এই দায় মেটাতে পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ছয় মাসের জন্য উচ্চ সুদে ৫০ কোটি ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিপিডি মনে করছে, সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি মনে হলেও বিপদ বাড়াবে। আমরা এখনই বকেয়া পরিশোধ করতে পারছি না, এর সাথে সুদসহ বোঝা যুক্ত হচ্ছে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তাদের পণ্য আমদানির বকেয়া দায় বেড়ে ৬০ কোটি ডলারের উপরে উন্নীত হয়েছে। সরকারের বড় প্রকল্প, বিপিসির জ্বালানি তেল, ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল। কিন্তু তার একটি বড় অংশ এখন আর পরিশোধ করতে পারছে না। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতো। কিন্তু এখন যৎসামান্য সরবরাহ করা হচ্ছে। যেমন ২০ কোটি চাইলে দেয়া হয় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি ডলার। এভাবে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় দায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ব্যাংকের সুনাম ক্ষণœ হচ্ছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। বিপরীতে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এখন অতি জরুরি পণ্য ছাড়া পণ্যের এলসি খোলা হচ্ছে না। এতে আমদানি কমে যাচ্ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকের এলসি থেকে কমিশন আয়ও কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের সরবরাহে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। এ কারণে তারা পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬.৫৮ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২.৮৯ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের মূলধন যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির। জুলাই-সেপ্টেম্বরে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটির প্রবিৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩৯.৭২ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩৬ শতাংশ। পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৯.৫৩ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরী পোশাকের অর্ডার কমে যাচ্ছে। অনেক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত অক্টোবরে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৩.৬৪ শতাংশ।

এক দিকে বৈদেশিক দায় বাড়ছে, অপর দিকে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই ৮ নভেম্বর প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় হয়েছে ১১১ টাকা। যদিও বাস্তবে তা কোথাও ১২৫ ও ১২৬ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে গত বছরের ৮ নভেম্বর প্রতি ডলার পেতে ব্যয় হতো ১০৩ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই প্রতি ডলারের বিপরীাতে ব্যয় বেড়েছে আট টাকা। অপর দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ১ নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬.৪৭ বিলিয়ন ডলার, ১৫ নভেম্বরে এসে তা কমে হয়েছে ২৫.২৬ বিলিয়ন ডলার। ১৫ দিনে মোট রিজার্ভ কমেছে ১২১ কোটি ডলার। এ দিকে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ গত ১৫ দিনে ১০৬ কোটি ডলার কমে হয়েছে ১৯.৬০ বিলিয়ন ডলার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/792066