১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১১:০৮

‘বেতন বাড়ে দুই টাকা, দাম বাইড়া যায় ২০ টাকা’

রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার। ফাইল ছবি ‘৬০ টাকা কেজিতে মিষ্টি কুমড়া কিনলাম। গত সপ্তাহে নিছিলাম সত্তুরে। দাম কমছে মনে হইলেও আসলে কি কমছে? গত বছর এই সময়ে তো ৪০-৪৫ টাকায় এ কুমড়া কিনছি।’ কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাকিব হাসান। আজ শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা বাজারে শাক-সবজি কিনতে এসেছিলেন তিনি। 

রাকিব হাসান জানান, বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে বেতন বাড়ে (ইনক্রিমেন্ট) তাঁর। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিজের ইনক্রিমেন্টের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘বছরে বেতন বাড়ে দুই টাকা। জিনিসপত্রের দাম বাইড়া যায় ২০ টাকা। বাকি টাকা কি ভিক্ষা কইরা জোগাড় করব?’ 

রাকিব হাসানের মতোই বাজারে সপ্তাহের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিনী রওশন আমীন। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বিশ-ত্রিশ টাকা বাড়ানোর পর পাঁচ-দশ টাকা কমায়। শুনলে মনে হয় দাম কমছে, আসলে তো কমে নাই।’ 

এদিকে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের বাজারদরের তালিকা বলছে, এখন জাত ভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম ৪০-৫০ টাকা। গত বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম ১১০-১৩০ টাকা, গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অধিদপ্তর বলছে, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২৮ শতাংশ। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। দেশি রসুনের দাম ১৪৪ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব ধরনের সবজির দামেরও একই অবস্থা। সস্তা সবজি হিসেবে পরিচিত কাচা পেঁপে বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৪০ টাকায়, গত বছর দাম ছিল ২০-৩০ টাকা। 

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তালিকা মিলিয়ে রাকিব হাসান আর রওশন আমীনের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে আলু, ডিম, সবজিসহ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তবে গত বছরের তুলনায় শীতের সবজিসহ প্রায় সবকিছুর দামই বেশ চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, টানা অবরোধের কারণে বাজারে কিছু পণ্যের আমদানি কম। তাই প্রত্যাশিত হারে পণ্যের মূল্য কমছে না। 

এদিন রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, কচুক্ষেত, খিলক্ষেত বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, বাঁধাকপি ৫০ টাকায়, লাউ ৭০-৭৫ টাকায়। শিম ৮০-৯০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, পটল ৫৫-৬০ টাকা, মুলা ৫০-৫৫ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫৫-১৮০ টাকা, শসা ৫৫-৬০ টাকা, বরবটি ৮০-৮৫ টাকা, ঝিঙা ৬০-৬৫ টাকা, কচুরমুখী ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

কচুক্ষেতের সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, সবজির দাম আগের চেয়ে একটু কমছে। হরতাল-অবরোধ না থাকলে আরও কমতো। 

মাছের দাম আগের মতোই চড়া। গরীবের মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়ার দামও ২০০-২২০ টাকা কেজি আর পাঙাস ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রুই মাছ ৩২০-৪০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে ৪০০-৮০০ টাকা, ইলিশ ১১০০-১৭০০ আর রুপচাঁদা ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির লাল ডিম প্রতি হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০-৮০০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে আজকের পত্রিকা যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে কৃষি বিপনণ অধিদপ্তরেরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

https://www.ajkerpatrika.com/302208