১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১১:০৭

অক্টোবর মাসে সড়কে মৃত্যু ৪৩৭, এক-তৃতীয়াংশ বাইক আরোহী

সড়ক, রেল ও নৌপথে গত অক্টোবরে মোট ৪৬৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৫০২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে সড়কে মৃত্যু হয়েছে ৪৩৭ জনের। এর এক-তৃতীয়াংশই মোটরসাইকেল আরোহী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল শুক্রবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটর করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪৬৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৪২৯টি ঘটেছে সড়কে, যা মোট দুর্ঘটনার ৯২.৪৬ শতাংশ।

এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৬৮১ জন। রেলপথে ২৯টি দুর্ঘটনায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ১৫৫ জন। নৌপথের ছয়টি দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু এবং দুজন আহত ও দুজন নিখোঁজ রয়েছে।

সড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ৫৬৪টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে।

এতে দেখা যায়, ২৪.৮২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.৯৩ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ২১.৮০ শতাংশ বাস, ১৮.৬১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজি বাইক, ৩.০১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২.৬৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.১৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫০.৮১ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭.০১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১৬.৫৫ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৪৬ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৬.১৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২২.১৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ৩০.৭৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৯.০৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৩৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং ০.৪৬ শতাংশ লেভেলক্রসিংয়ে
 

 সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, ১৩৪টি।

এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪১ জন নিহত ও ১৩২ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, ২৪টি। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে চারজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য, ১২০ জন চালক, ৩৬ জন পথচারী, ২৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫২ জন শিক্ষার্থী, তিনজন শিক্ষক, ৬৮ জন নারী, ৩০টি শিশু এবং ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৯৮ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৩৬ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৬ শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন পরিবহন শ্রমিক ও ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, মার্চে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং এসব যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফগলাইটের অবাধ ব্যবহার, চলতি বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টো পথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংগঠনের সুপারিশগুলো হচ্ছে মোটরসাইকেল ও ইজি বাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান, রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় সৃষ্ট ছোট-বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা এবং গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/11/11/1335081