১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১১:০৬

দেশে ৭ বছর ধরে ১২ মাস ডেঙ্গু

দেশে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছর ধরে ১২ মাসই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর সংক্রমণ থাকছে। এই বছরও একই পরিস্থিতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ডেঙ্গুশূন্য মাস ছিল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে গেছে।

এটি শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও। ডেঙ্গু শুধু কোনো বিশেষ মৌসুমে হবে, এমন নয়। সারা বছর থাকবে।

কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা—এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ করে ফোরকাস্টিং (পূর্বাভাস) মডেল তৈরি করি; যার মাধ্যমে আগাম ধারণা দিতে পারি।

আমাদের ফোরকাস্টিং মডেল বলছে, আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে।’

চলতি মাসে ঢাকার বাইরে ভর্তি ৭৯%, মৃত্যু ৫৮%

গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিনজন, ঢাকার বাইরে আটজন।

একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৩৩৩ জন। ঢাকায় ২৯৮ জন, ঢাকার বাইরে এক হাজার ৩৫ জন।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে চলতি নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু ১১২ জনের। এর মধ্যে ৪৭ জন ঢাকার ও ঢাকার বাইরের ৬৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৫৭২ জন। মৃত্যু এক হাজার ৪৬০ জনের।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি

ষাটের দশকে দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর ২০০০ সালে বড় আকারে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশের বড় বড় শহরের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামেও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এ বছর সারা দেশেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত সাত বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। নভেম্বরে রোগী ছিল খুব কম।

গত সাত বছরের মধ্যে চার বছরই ডেঙ্গু সংক্রমণের পিক ছিল সেপ্টেম্বর মাসে। তিন বছর পিক হয় অক্টোবরে এবং এক বছর পিক হয় আগস্টে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন এক দিকে সারা বছর ডেঙ্গু হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে সংক্রমণ বেশি হবে। আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর গ্রামগঞ্জে ডেঙ্গু বেশি হবে এবং সারা বছর তা থাকবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বিত মশা ব্যবস্থাপনা

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আইইডিসিআর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছিল। সে নির্দেশনা এ পর্যন্ত মানা হয়নি। আগামী বছরগুলোতে যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য বছরের শুরু থেকে মশা জরিপ, হটস্পট চিহ্নিতকরণ, ডেঙ্গু নজরদারি জোরদার করতে হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/11/11/1335078