১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১১:০৩

এক সপ্তাহে চিনির দাম কেজিতে বাড়লো ১০ টাকা

 

চিনির দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাজারে বেড়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম। প্যাকেটজাত চিনির দাম গায়ে ১৩৫ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গত এক সপ্তাহে খোলা চিনির কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে। সরকার ও চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যতবারই চিনির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা একবারও কার্যকর হয়নি। প্রায় আড়াই মাস আগে খোলা চিনির কেজি ১৩০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে।

চিনি বিক্রেতা হোসেন মিয়া বলেন, হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

এ কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১০-১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০ দিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করলেও বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি। 
এমনকি বেশি দাম দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বাজারে বেশির ভাগ খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। কাওরান বাজারে এসেছেন ক্রেতা হানিফ। তাকে একের পর এক দোকানে চিনি খুঁজতে দেখা যায়। হানিফ বলেন, পাঁচটি দোকানে দেখলাম; কিন্তু চিনি পেলাম না।

কাওরান বাজারের মেসার্স সালমান ট্রেডার্সের বিক্রেতা আবদুল্লাহ জানান, একদিন আগেই তাদের চিনি শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, চিনির প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ১৩৫ টাকা কেজি। তবে পাইকারি কিনতে হয় ১৩৭ টাকা। তাই এখন চিনি দোকানে রাখি না। অনেক সময় ম্যাজিস্ট্রেট এসে প্যাকেটের গায়ের দামের চেয়ে বেশি দাম রাখায় জরিমানা করে। তাই অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
কাওরান বাজারে ১৫টি দোকানের মধ্যে পাঁচটি দোকানে চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই বাজারের আনোয়ার ট্রেডার্সের বিক্রেতা শামীম বলেন, আমাদের খোলা চিনি কেনা ১৩৭ টাকা করে। এরপর দোকানে আনতে পরিবহন খরচ আছে। তাই আমরা ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৪৫০ টাকা। এখন ৫০ কেজির বস্তা ৬৮৫০ টাকা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ৬৪০০ টাকা।

আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে আবারো দাম বেড়েছে চিনির। এ ছাড়া ডলারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করছে গ্যাস সংকট। গত দুই-তিনদিন ধরে কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। সে জন্য চাহিদা মতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে চিনির সরবরাহ কমছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছর আগে এই সময় চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। টিসিবি’র তথ্যমতে, চিনির খুচরা দাম গত এক মাসের ব্যবধানে ৩.৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এই হার আরও অনেক বেশি। এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করেছে। ২০২৪ সালের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত এই শুল্কহার বলবৎ থাকবে। দাম যেন ক্রেতার নাগালে থাকে, সে জন্যই শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবে শুল্ক কমানোর ঘোষণার দিন বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। এর পর কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়লো।

বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, কোনো কোনো আমদানিকারকের কাছে চিনি নেই। যাদের আছে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মিলগেটে পাইকারি প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ১৩৭ টাকা দিয়ে।
দেশে চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, কারখানায় গ্যাসের চাপ কমায় উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে দাম আবারো বেড়েছে। ডলারের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক।

https://mzamin.com/news.php?news=82968