১০ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১২:২৮

আসছে বছরে তাপমাত্রায় সব রেকর্ড অতিক্রমের আশঙ্কা

আসছে বছরে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা সব রেকর্ড ছাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়বে। এতে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে পারে। এ ছাড়া সাগর থেকে নদীতে নোনা পানি ঢুকে কৃষিজমি এবং মিঠাপানির প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই সাথে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ১.৫০ থেকে ২.০০ সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। সমুদ্রের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের ৭০ ভাগ তলিয়ে যাবে। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। এ দিকে গত অক্টোবরকে সোয়া লাখ বছরের উষ্ণতম মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (থ্রিসিএস)।

 

থ্রিসিএসের আগে পুরো বছর সম্পর্কেও একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। তখন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরকেও উষ্ণতম উল্লেখ করে তারা বলেছিল শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালটা ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। অক্টোবরের উষ্ণতা সেই আশঙ্কা আরো বাড়াল।

থ্রিসিএস জানায়, সদ্য বিদায় নেয়া অক্টোবর মাসে সারা বিশ্বের গড় উষ্ণতা আগের যেকোনো অক্টোবরের চেয়ে ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত এক লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে আর কোনো বছরের অক্টোবর মাস এত উত্তপ্ত ছিল না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুত বাড়ছে। ফলে আবহাওয়া চরম রূপ নিচ্ছে। প্রায় নিয়মিত বিরতিতে ঝড়ের তাণ্ডবের মূল কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কথাই উল্লেখ করে আসছেন বিজ্ঞানীরা।

চলতি বছর চরম গরম যেমন পড়েছে, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিও হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেও ছিল চরম আবহাওয়ার দাপট। তখন গ্রিসে যেমন ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের তাণ্ডব চলেছে, আবার প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যাও হয়েছে। সেই মাসে লিবিয়াতেও ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডার্না, কয়েক হাজার মানুষের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে বন্যা।
যদিও গত সেপ্টেম্বর ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ সেপ্টেম্বর। এর আগে আর কোনো সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মতো গরম ছিল না। আগে এমন পূর্বাভাসই দিচ্ছিল ইইউর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (থ্রিসিএস)। এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের গড় তাপমাত্রা সে রকম ইঙ্গিতই দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা আগের যেকোনো বছরের প্রথম ৯ মাসের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ০.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (০.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ফারেনহাইট বেশি ছিল।

আগে বছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি গরম ছিল ২০১৬ সালে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের তাপমাত্রা তার চেয়েও ০.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলেও সিথ্রিএসের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এরই মধ্যে উষ্ণতম বছর হওয়ার ইঙ্গিত রাখা ২০২৩ সাল সবচেয়ে চরম আবহাওয়া দেখেছে গত সেপ্টেম্বরে। ওই ৩০ দিনে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৬.৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। ১৯৯১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত রেকর্ড করা মাসিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার চেয়ে তা ০.৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/790370