৯ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪

রোগী ও মৃত্যু দুটিই বাড়ছে

দেশে শ্বাসতন্ত্রের রোগী এবং এই রোগজনিত মৃত্যু বাড়ছে। শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের গত চার বছরের উপাত্ত থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভোগা রোগীদের ৮ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৪৬.৩১ শতাংশ এবং এই বয়সী রোগীর মৃত্যু ৭১.৯১ শতাংশ।

অ্যাজমা, যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব রোগীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ ফুসফুসের ক্ষতি। পরিবেশ ও বায়ুদূষণ, রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, ধূমপান—এসব কারণে শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে রোগীর মৃত্যু। শহরগুলো বেশি দূষণের শিকার হলেও এখন গ্রামের রোগী বেশ বেড়েছে।

সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় এবং রোগীর চাপ বাড়তে থাকে।

 

আক্রান্ত মৃত্যু বাড়ছে

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চার বছরে হাসপাতালে প্রতিবছর রোগী বেড়েছে। হাসপাতালে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩০১ জন, মৃত্যু ৭২৮ জনের। চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২২ সালে এখানে চিকিৎসা নেয় এক লাখ ৬১ হাজার ৮৩৩ জন, মৃত্যু ৯৪৭ জনের। ২০২১ সালে চিকিৎসা নেয় এক লাখ ৩৮ হাজার ২৪৮ জন, মৃত্যু ৯৪৫ জনের। ২০২০ সালে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেয় এক লাখ ১০ হাজার ৭৭৪ জন, মৃত্যু ৮৭৭ জনের।

২০২২ সালে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোগীর ৬০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ শতাংশ নারী। বয়সের ভিত্তিতে ৭.৯৬ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৫.৪২ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৩০.২৩ শতাংশ, পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৪৬.৩১ শতাংশ।

মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ পুরুষ এবং ২২.৯১ শতাংশ নারী। ১৫ বছরের নিচে মৃত্যু ১.৯০ শতাংশ, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ২১.১১ শতাংশ, পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৭১.৯১ শতাংশ।

ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছরের নিচে যে শিশুরা চিকিৎসার জন্য আসে, তাদের সাধারণত নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেশি। চিকিৎসায় এরা ৯৬ শতাংশ ভালো হয়ে যায়। বয়স্ক যাঁরা আসেন, তাঁদের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তিনি বলেন, বয়স্ক যেসব রোগী আসে তারা নিউমোনিয়া, সিওপিডি, অ্যাজমা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আসে। এসব রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ জন্য মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটতম হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 

শীতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি

গতকাল বুধবার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে রোগীর অনেক ভিড়। হাঁচি-কাশি, ব্রংকাইটিস, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের নানা সমস্যা নিয়ে এসব রোগী এসেছে। টিকিট হাতে চিকিৎসকের সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকা বেশির ভাগ রোগী গ্রাম থেকে এসেছে।

চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকা গাজীপুরের রফিকুল ইসলাম (৪৫) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্টের সমস্যা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে। প্রতিবছর শীতের সময় এই সমস্যা বাড়তে থাকে। ওষুধ নিলে ছয় মাস ভালো থাকি, ছয় মাস বিছানায়। শ্বাসকষ্টের কারণে কিছু করতে পারি না।’

ঢাকার নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধুলাবালির যন্ত্রণায় রাস্তায় বের হওয়া দায়। মাস্ক ব্যবহার করেও টেকা যায় না। আমার দুই দিন ধরে শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। বাসায় ছোট বাচ্চা, বাচ্চার মা—সবার হাঁচি-কাশির সমস্যা।’

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সময় শিশুদের অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ব্রংকাইটিস ও কাশি বাড়ে। ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ে। এর মূল কারণ হলো বায়ুদূষণ। 

তিনি বলেন, এ সময় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে গর্ভবতী মা, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। অটিস্টিক শিশু, জন্মকালীন ওজন কম হওয়ার একটি কারণও বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণ কমানো না গেলে শিশু ও বৃদ্ধ সবাই অসুস্থ হবে, বিভিন্ন রোগ বাড়বে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/11/09/1334501