৯ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯

সংস্কারে ব্যয় ৬৪২ কোটি টাকা

 

কোনো নিয়মনীতি মানেন না কেউ। যে যার মতো যত ভারী যানবাহন পাচ্ছেন, তাই চালাচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়কে। এর খেসারত হিসাবে সাড়ে তিন বছরে সংস্কার কার্যক্রমের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬৪২ কোটি টাকা। এখন আবার বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ। ফলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংস্কার খাতে মোট ব্যয় হবে ৯৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সড়কটি উদ্বোধনের দুই বছর পরই অপরিহার্য হয়ে পরে সংস্কার। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি অর্থায়নে হাতে নেওয়া হয় ‘৪-লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) চার বছরের জন্য পরাফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ নামের প্রকল্পটি। এটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেকে চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়টির গুরুত্ব ও চার লেনে উন্নীতকরণের খরচ বিবেচনায় ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটি না হওয়ায় এখন বাধ্যতামূলকভাবে শত শত কোটি টাকা চলে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, রাস্তাটির ট্রাফিক ব্যবস্থার দায়িত্ব যাদের, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। সেটি করা না গেলে রাস্তাটিতে চলাচলের যে আইনকানুন আছে, তা কেউ মানবে না। ফলে রাস্তা ভেঙে যাবে। সেটি তখন সংস্কার করতে হবে। এভাবে বারবার নিয়ম ভঙ্গ হবে, রাস্তা নষ্ট হবে আর সংস্কারে অর্থ ব্যয় করতে হবে। এটা একটা দুষ্টচক্রের মতো হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে হয় রাস্তার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, না হয় নিয়মকানুন মানার ব্যবস্থা নিতে হবে। জবাবদিহি করা না হলে এটা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামলাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কটির দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটিগেট পর্যন্ত ২০১৩ সাল থেকে উন্মুক্ত। পরবর্তী সময়ে ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৪-লেনে উন্নীতকরণ শেষে ২০১৬ সালের ২ জুলাই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ রক্ষাকারী এবং জাতীয় অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত ভরবাহী পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল করছে। ক্রমবর্ধমান পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনের জন্য মহাসড়কটি পূর্ণ উপযোগিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা দরকার হয়ে পড়ে। অধিকসংখ্যক ও অনুমোদনহীন ভারবাহী যান চলাচলের ফলে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পর্যায়ে সরকারি অর্থায়নে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার সংক্রান্ত প্রথম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। সেসময় মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত। গত ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৬৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে কিছু কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ব্যয় বাড়া ও কমার কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশোধনীতে ১৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৯৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে মোট ব্যয়ের তুলনায় বাড়ছে ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। ফলে চার বছরের এ প্রকল্পটি যাচ্ছে ৬ বছরে।

জানা যায়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনী প্রস্তাব পাওয়ার পর ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে ৬ ধরনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রকল্পের প্যাক কোট, ওয়ারিং কোর্স (রাট ফিলিং) এবং রাট কারেকশন বাই মিলিং মেশিন অঙ্গগুলোর ব্যয় পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে বলা হয়। সেক্ষেত্রে পরিমাণ ও ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ব্যয় পুনঃপরীক্ষা করে যৌক্তিকভাবে কমাতে বলা হয়। সেই সঙ্গে পরামর্শক ব্যয় পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ দেয় পিইসি। পাশাপাশি পরামর্শকের টার্ম অব রেফারেন্সসহ (টিওআর) বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এসব সুপারিশ প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

একনেকে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করতে যাচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। একনেক সভার কার্যপত্রে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, মহাসড়কটি দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগোযোগের ক্ষেত্রে এটির পূর্ণ উপযোগিতা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা দরকার। নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/738067