৯ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৫

সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রতি কিমিতে ব্যয় ৭১ কোটি টাকা

ড্রেন নির্মাণ ব্যয় কিলোমিটারে প্রায় ১০ কোটি টাকা

 

 

উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ নিয়ে দুই দশক ধরে প্রশ্ন উঠেছে। সমীক্ষা করে আবার সমীক্ষা না করেও খাত প্রতি খরচ অনেক বেশি দেখানো হয়। মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ (ধলঘাটা) এর জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ব্যয় ৭১ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতি কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ফুটপাথ নির্মাণে খরচ দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৬১ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এসব ব্যয় পিইসি সভায় কমিয়ে আনা এবং যৌক্তিক করার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকল্পেই একই অবস্থা। প্রকল্পটি আগের একনেকে স্থগিত রাখা হয়। আজ আবার একনেকে উঠছে।

প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় মহেশখালী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ হাব এবং ভারী শিল্প স্থাপনার একটি রূপরেখা প্রদান করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২১ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বেজার গভর্নিং বোর্ড সভায় মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা মৌজায় এক হাজার ২৪০ একর জমিতে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যেকোনো শিল্প স্থাপনার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইতোমধ্যে ৫৭০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ এ জমি বরাদ্দপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের নিমিত্ত এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৯৫ কোটি ৯১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা; যা সরকারের কাছ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণে নেয়া হবে। তিন বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আগামী ২০২৬ সালে সমাপ্ত করার কথা।

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম, ১৫ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা, ইনডোর সাব-স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ ৬.১৫ কিলোমিটার, ফুটপাথ নির্মাণ ১২.৫০ কিলোমিটার, সীমানা প্রাচীর ৯.০০ কিলোমিটার, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক ১২.৫০ কিলোমিটার।

প্রকল্পের খরচের হিসাব থেকে দেখা যায়, সোয়া চার কিলোমিটার সংযোগ সড়ক (বাহ্যিক) নির্মাণে ২৯৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এখানে প্রতি কিলোমিটার সড়কে ব্যয় হবে ৭১ কোটি দুই লাখ টাকা। আর ১৫ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনে খরচ ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যেখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফুটপাথ নির্মাণ ১২.৫০ কিলোমিটার ব্যয় হবে ৪৫ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে তিন কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২ কিলোমিটার, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণে ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটার সড়ক করতে ৩৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি। এসব ব্যয় নিয়ে গত একনেকেও প্রশ্ন উঠেছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ বলছে, এই প্রকল্পে দুটো পিইসি করা হয়। ২য় পিইসি সভার সুপারিশের আলোকে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় আগের প্রস্তাব থেকে ২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ (ধলঘাটা) স্থাপনের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এতে দেশীয় বা বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ ঘটবে। আপামর জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কক্সবাজার জেলা ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন হবে। আর এর মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/790152