৯ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৪

জাতিসঙ্ঘে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে

নির্বিচারে গ্রেফতারসহ নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠবে

জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে। এতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতারসহ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠবে। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘের সনদ অনুসারে শ্রম অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, লিঙ্গ সমতা ও মানবপাচারের বিষয়গুলোও স্থান পাবে। আগামী ১৩ নভেম্বর জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশ্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা (ইউপিআর) ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে সরকার।

গতকাল জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে জানানো হয়েছে, ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিশ্বের ১৪টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। পর্যালোচনা বৈঠকগুলো গত ৬ নভেম্বর শুরু হয়েছে, যা ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে।

 

ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপ জাাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত। তবে জাতিসঙ্ঘের সব সদস্যরাষ্ট্র এ পর্যালোচনায় অংশ নিতে পারে। চতুর্থ ইউপিআরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন প্রতিনিধি (ট্রয়কা) দেশ হচ্ছে কিউবা, পাকিস্তান ও রোমানিয়া। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন।

ইউপিআর হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের মোট ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের যুগ্ম পর্যালোচনা (পিয়ার রিভিউ)। ২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জাতিসঙ্ঘের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি এ পর্যন্ত তিনবার পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালের এপ্রিল এবং ২০১৮ সালের মে মাসে মোট তিন দফায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
পর্যালোচনাগুলো যেসব নথিপত্রের ভিত্তিতে হয়ে থাকে তা হলো- ১. সংশ্লিষ্ট দেশের পেশকৃত প্রতিবেদন বা জাতীয় প্রতিবেদন, ২. স্বতন্ত্র মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও গ্রুপ, যা স্পেশাল প্রসিডিউরস হিসেবে পরিচিত, বিভিন্ন মানবাধিকার চুক্তি তদরক কমিটি এবং জাতিসঙ্ঘের অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত তথ্য এবং ৩. জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংস্থা ও নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য অংশীজনদের দেয়া তথ্য।

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল জানিয়েছে, চতুর্থ ইউপিআরের সময়ে রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, আগেরবারের পর্যালোচনার পর দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা, যাতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া দেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা। পর্যালোচনার পর বাংলাদেশসংক্রান্ত ইউপিআরের সুপারিশগুলো ১৫ নভেম্বর গ্রহণ করা হবে।
ইউপিআরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ তার মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অঙ্গীকার ও অর্জনগুলো তুলে ধরে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, বেলজিয়ামসহ আটটি দেশ বাংলাদেশবিষয়ক পর্যালোচনার জন্য আগাম প্রশ্ন পাঠিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও বাংলাদেশের কিছু বিষয়ে সুপারিশ জমা দিয়েছে।

ইপিআরে বাংলাদেশ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবে। এ ক্ষেত্রে নেয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরবে। মানবাধিকারসংক্রান্ত লিখিত ও সম্ভাব্য তাৎক্ষণিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল প্রস্তুতি নিয়েছে।
ইতোমধ্যে লিখিতভাবে জমা দেয়া প্রশ্ন অনুযায়ী, প্রতিশোধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা ছাড়াই জনগণের শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশ সরকার কিভাবে নিশ্চিত করছে, তা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, প্রার্থী ও প্রতিবাদকারীদের হয়রানির খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

ব্রিটেন জানতে চাইবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে গুম, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে বর্তমান ও অতীতের অভিযোগগুলোর বিষয়ে স্বচ্ছতাকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ কী করছে? বাংলাদেশ সরকার কিভাবে হয়রানি ও অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমগুলোকে সুরক্ষা দিচ্ছে? মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা জানতে চায় ব্রিটেন।
জোরপূর্বক গুম থেকে সবাইকে সুরক্ষা সনদ ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ সমর্থন এবং মৃত্যুদন্ড বাতিল করতে বাংলাদেশ উদ্যোগ নেবে কি না, জানতে চাইবে বেলজিয়াম। এ ছাড়া গুমবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ ও অন্যান্য স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারদের সফরের জন্য বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানাবে কি না, তা জানতে চায় দেশটি।

সাইবার নিরাপত্তা আইন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, বৈদেশিক অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনের মতো কয়েকটি আইন ও নীতির প্রসঙ্গ তুলবে সুইডেন। আগাম প্রশ্নে দেশটি বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সংগঠনগুলোর জন্য কাজের উন্মুক্ত পরিবেশ কিভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে? এ ছাড়া ওই আইনগুলো নিয়ে অংশীজনদের উদ্বেগ দূর করতে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/790155