৮ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১১:০৮

পরিবেশ নেই স্বীকার করেও একতরফা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তফসিল ঘোষণার আগে শেষবাবের মতো সংলাপের আয়োজন করেছিল। এ সংলাপে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ গ্রহণ করেনি। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে অংশ নিয়েছে ২৬টি দল। ১৮টি রাজনৈতিক দল এ সংলাপ বর্জন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ওই দিনই স্বীকার করেছেন বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তবু একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। গত রোববার লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ বলেও অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। এসব অনিয়মের কারণে এ দু’টো আসনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির প্রার্থী ছাড়াই মাত্র দু’টি আসনের উপ নির্বাচনের ভোটই সুষ্ঠু করতে পারছে না ইসি। সেখানে এমন পরিবেশে একদিনে তিনশ’ আসনের ভোট কিভাবে সুষ্ঠু করবেন? এ প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

সূত্রমতে, তফসিলের আগে শেষ বারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করার জন্য গত শনিবার এক সংলাপের আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে ইসির নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ আমন্ত্রণ পত্র বিএনপিকেও পাঠানো হয়। বিএনপি তালাবদ্ধ অফিসের গেটে আমন্ত্রণের চিঠি রেখে যায় ইসির পত্র বাহক। উক্ত সংলাপে ২৬টি রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে। আর ১৮টি রাজনৈতিক দল এ সংলাপ বর্জন করেছে। এগুলোর প্রায় সবই সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল। এ দলগুলো হলো, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ জাসদ।

সংলাপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা সবার সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই। তাই যারা সংলাপে অংশ নেয়নি তারা ইচ্ছা পোষণ করলে তাদের কথাও শোনার চেষ্টা করবো।

সিইসি বলেন, আমরা কম সময় নিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। দ্রুততার কারণে হয়তো কোনও দল অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। তারা যদি ইচ্ছা পোষণ করে, কমিশনে আলাপ করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করবো। কারণ, আমাদের ইচ্ছা, আমরা সবার সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন, রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে, আমরা বলেছি, সে বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা সবসময় ইতিবাচক। কিন্তু সেই সংকট নিরসনের সামর্থ্য আমাদের নেই, সেই ম্যান্ডেটও নেই।

আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। কেউ কেউ পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। অধিকাংশ আমাদের অবস্থান বুঝেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনও অংশ নিতে পারছে না, আমরা সেটি স্বীকার করেছি। পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক।

এদিকে ভোটে অনিয়মের ছবি প্রকাশ হওয়ায় সদ্য সমাপ্ত লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গত রোববার লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ বলেও অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। উপনির্বাচনে স্থূল কারচুপির অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক। ভোটের পরদিন গত সোমবার দুপুরে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

আসনটিতে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী। ভোটের দিন দুপুরে দুই প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

এছাড়া আসনটিতে ভোটগ্রহণ চলাকালে একটি কেন্দ্রে ‘জাল ভোটের ভিডিও’ ছড়িয়ে পড়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানকার একটি ভোটকেন্দ্রে একজনকে একাধিক ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। গত সোমবার সেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

ভাইরাল হওয়া ৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভোটকক্ষে বসে এক ব্যক্তি ব্যালট পেপারে বিরামহীনভাবে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। তার গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলছে। এসময় ৪৩টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে তাকে সিল মারতে দেখা যায়।

গত রোববার দু’টি আসনে উপনির্বাচন হলো, এখানে বিএনপি বা বিরোধী দলের কোন প্রার্থী অংশ নেয়নি। এমন পরিবেশে মাত্র দু’টি আসনের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় তিনশ’ আসনে একদিনে কিভাবে সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠান করা যাবে, এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রয়েছে।

https://www.dailysangram.info/post/540131