৫ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:২৩

সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা

- এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা

 

বেড়েই চলেছে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এই ঋণের দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া ঋণ ও বিদেশী ঋণও রয়েছে।

আলোচ্য অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সরকারের ঋণস্থিতির এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতির পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এটি ছিল জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়েছে জিডিপির আড়াই শতাংশের বেশি।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করোনা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বাড়ার কারণে সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, সরকারের এই ঋণ আগামীতে আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে বিদেশী ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

এ দিকে অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণের ৫৮ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ এবং ৪২ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল আট লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা (জিডিপির ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ)।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ কমেছে। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ সাত হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা (২০২১-২২ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ১৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা)। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল খাতে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, ট্রেজারি বন্ড ও এসপিটিবি খাতে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮৩ কোটি টাকা ও সুকুক খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

অন্য দিকে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ব্যাংকবহির্ভূত (সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য) খাতে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাতে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে তিন লাখ ৬৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা (২০২১-২২ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা) এবং অন্যান্য খাতে মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাবে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জীভূত মোট বৈদেশিক ঋণ স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ছয় লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা (জিডিপির ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ)। তবে ঋণের স্থিতি নিয়ে অর্থ বিভাগের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এক বড় রকমের ফারাক লক্ষ করা গেছে।

যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার (জিডিপির ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ)। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় আট লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা (১ ডলার = ১০৯ টাকা হিসাবে)।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/789154