৪ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:০৬

আন্দোলনে থাকা দলগুলো ইসির সংলাপে যাচ্ছে না

 

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে বৈঠকে যাচ্ছে না। বিএনপি তো ইসির চিঠি গ্রহণই করেনি। যদিও নিবন্ধিত অন্যান্য দলগুলো আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে তারা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মানা হচ্ছে না। ফলে এই ইসির সংলাপে যাওয়ার কোনো অর্থই হয় না। তারা বলছেন, এই ইসির সাথে বৈঠক করা বা সংলাপে বসা অর্থহীন। বর্তমানে যে কারণে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে সেগুলোর সমাধান ইসির পক্ষে সম্ভব না। বিএনপির নেতৃত্বাধিন ১২ দলীয় জোটের নিবন্ধিত দলগুলোও ইসির সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে ইসির এই আয়োজন কতটা সফল হবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এক দিনে ৪৪টি দলের সাথে সংলাপ কতটা যৌক্তিক? এটা তো ইসির একটা সংলাপ খেলা।

ইসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২২টি দলকে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় একটি বৈঠক এবং পরের ২২টি দলকে নিয়ে বিকেল ৩টায় বৈঠক হবে। তারা সবাইকে চিঠি দিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় যে ২২টি দলের সাথে বৈঠক সেগুলো হলো, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (বিএসপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, গণফ্রন্ট এবং ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ।

আর বিকেল ৩টার বৈঠকে যাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সে দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমরা আন্দোলনে। আমরা জানিয়ে দিয়েছি ইসির সংলাপে যাচ্ছি না। এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। কিন্তু ইসির এই সংলাপে যাচ্ছি না। কেন যাচ্ছি না, সে ব্যাপারে আজ শনিবার দলীয় অফিসে ব্রিফিং করে জানাবো। আর একটা খোলা চিঠি দেবো ইসির উদ্দেশে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। কিন্তু ইসির আমন্ত্রণে যাচ্ছি না। কারণ আমাদের যেসব দাবি-দাওয়া ছিল সেগুলো তো পূরণ হয়নি। ফলে ইসির সাথে বসে কি লাভ হবে।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তারা চিঠি পেয়েছেন। তবে তাদের ১২ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা যেসব নিবন্ধিত দল আছেন ইসির আমন্ত্রণে যাবেন না। কারণ তারা যে দাবিতে এখন রাজপথে আন্দোলন করছেন সেটা ইসির পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের দাবি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেহেতু চিঠিতে বলছে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায় ইসি, তাই আমি প্রতিনিধি পাঠাবো। তবে আমাদের একটা লিখিত বক্তব্য থাকবে। আমাদের বক্তব্য হলো, বর্তমান সরকার ও এই ইসি বলবৎ থাকলে আমরা এদের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। এটা স্পষ্টভাবে তাদেরকে জানিয়ে দেবো।

রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা যখন কারাগার বা পালিয়ে আছেন, এমন পরিস্থিতিতে ইসি বিএনপিকেও সংলাপের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। অথচ পরিস্থিতি এতই জটিল যে ইসির আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করার মতো লোকও দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই দায় এড়াতে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। কখনো বলছে রাজনৈতিক দলগুলো সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আবার কখনো বলছে, কাউকে নির্বাচনে নেয়া নির্বাচন কমিশনের কাজ না। তাদের বুঝতে হবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই বলেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপের খেলা, সত্যিকারের সংলাপ নয় এটা। এটা শুধুই লোক দেখানো। সব দলের জন্য লেভেল সমতল মাঠ নিশ্চিত করতে ইসির ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, এই কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/788922