৪ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:০৪

কোন ফর্মুলাতেই কমছে না নিত্যপণ্যের দাম 

 

সরকারের তৈরি কোন ফর্মুলাতেই লাগাম টানতে পারছে না নিত্যপণ্যের দামে।  অসহায় ক্রেতাকে প্রতিনিয়ত বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। বেতন-মজুরি না বাড়ায় প্রতিদিনই কাটছাট করতে হচ্ছে খরচের সীমা। তবে যেদিকেই যাক না কেন আগের দিনের খরচে আর পেরে ওঠছে না। প্রতিদিন কাটছাট করতে হয় বাজারের তালিকায়। বাস্তবতা হলো-  নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তবে বিক্রেতাদের বাড়তি দাম নেওয়ার ক্ষেত্রে অজুহাতের অভাব নাই। তবে একথা সবার জানা যে যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনগণকে জিম্মি করছেন তারা এই সমাজেরই মানুষ। সিন্ডিকেট করে পকেট পূর্ণ করার জন্যই এসব করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিংবা ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস নাই। 

আচ্ছা শীতের সময় এই মৌসুমে চাষ হওয়া শাকসবজির দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, দাম কমছে না শীতকালীন শাক-সবজির। বরং কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মৌসুমী সবজি। মগবাজারের রিপন বাজারে গিয়ে দেখতে পান যে এক আঁটি মূলা শাকের দাম ৩০ টাকা। আর আলুর দাম বেড়ে ৬০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১০০ থেকে ১৭০ টাকা প্রতি জোড়া। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা দামে। এছাড়া কাঁচা পেঁপে ৪০, গোল বেগুন, কাঁকরোল, টমেটো, কচুমুখী বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকায়। দেশি শসা, করলা, মূলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। পটল, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া গাজর ১২০ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আরে বাবা রাশিয়া আর ইউক্রেন থেকে তো শীতকালীন শাকসবজি আসে না। তাহলে এসব শাকসবজির দামে দুইগুণ তিন গুণ বাড়বে কেন? এর জোতসই জবাব কারো কাছেই নাই ? এরপরও  কিছু একটা বলছেন বিক্রেতারা দোষ বিরোধী দলের অবরোধের। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে বিভিন্ন সংস্থা সেগুলো তদারকি করে। কিন্তু কাঁচাবাজারে এরকম তদারকি কখনও চোখে পড়েনি। হাতিরপুল বাজারে সবজি ব্যবসায়ী রবিন অধিকারী আলমগীর বলেন, এখন শীতের সবজি মাত্র উঠা শুরু করেছে। কিছু দিনের মধ্যে পুরোদমে বাজারে আসবে, তখন দাম অনেক কমে যাবে।

অথচ গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সপ্তাহঘুরে তা এখন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ কেজি বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি। অথচ সরকার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছে।   মাঈদুল নামের এক মধ্যবিত্ত বসবাস করেন মধুবাগে। তার বেতন মাসে ২৫-২৬ হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য  চার জন। তিন বেলা কোনোভাবে খেতেই ১৬-১৭ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। বাসা ভাড়া দিয়ে সংসারের বাকি খরচ কীভাবে চলে ভাবতে পারেন ? প্রশ্ন এই ভূক্তভোগীর। বলেন, প্রতি মাসেই ধার করতে হয়। সেই ধারের চক্র থেকে বের হতে পারি না।'

নিয়ন্ত্রণহীন দামে রাশ টানতে গত সোমবার ডিমের পর আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব কি বাজারে পড়েছে ? গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পড়েনি। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত এক দশকে আলুর সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৫ টাকা প্রতি কেজি।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে নির্ধারিত দামে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম এই তিন পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। উল্টো দেড় মাস পরে দাম এখন আরও বেড়েছে। বেঁধে দেওয়া দামের দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু। ডিমের দাম দ্বিগুণ না হলেও দাম বেড়েছে। 

খানিকটা কম দামে পণ্য কিনতে মগবাজার থেকে পায়ে হেঁটে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন রিক্তা খাতুন নামে এক গৃহিনী। তার কাছে একজন বিক্রেতা মাঝারি আকারের একটি মিষ্টিকুমড়ার দাম চাইলেন ৮০ টাকা। দাম শুনে তিনি সেটা রেখে দিলেন। পরে হাতে থাকা এক আঁটি লাউ শাক দেখিয়ে বললেন, 'এই এক আঁটি শাক কিনছি ৪০ টাকা দিয়ে। তাও একটা লতি কম। 

আনিসুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন পুরাই অসাধু। পেঁয়াজ আমদানি করতে বেশি টাকা লাগবে সেই খবর শুনেই তারা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আলু আমদানি হচ্ছে সেটা কোনো প্রভাব নেই। চিনির শুল্ক কমেছে সেটার কোনো খোঁজ নেই।

তিনি বলেন, আসলে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর করেন। কিন্তু কমলে সে দাম কার্যকর করতে তাদের গড়িমসির শেষ থাকে না।

https://www.dailysangram.info/post/539790