৪ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:০৩

শ্রমিক সমস্যার যৌক্তিক সমাধান হোক

 

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প একটি অতি উল্লেখযোগ্য খাত। এটি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অতি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও শ্রমিকরা বরাবর অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত। এই খাত জাতীয় অর্থনীতিকে পরিপুষ্ট ও মালিক পক্ষের অর্থবিত্তের পরিসর বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তাদেরকে নামকাওয়াস্তে বা প্রতীকী মজুিরতে কাজ করতে হয়। ফলে তাদেরকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় অতিকষ্টে। এই সমস্যা সমাধানে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।

সম্প্রতি মালিক পক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন মজুরি প্রস্তাব করলে শ্রমিকরা এতে আশ^স্ত হতে পারছেন না। কারণ, এর আগেও তাদেরকে নানাবিধ আশ^াস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এমতাবস্থায় মালিকপক্ষের নতুন মজুরি প্রস্তাবের প্রতিশ্রুতির পরও থামছে না তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলন বরং পরিস্থিতি দিনের পর দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের দাবিতে পয়েন্ট অব নো দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীর মিরপুর, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। 

পুলিশ বলেছে, পোশাকশ্রমিকেরা মিরপুরে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছুড়েছেন। এতে পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। গাজীপুরে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়। আশুলিয়ায় শ্রমিকেরা একটি কারখানার ফটক ভেঙে গ্যারেজে থাকা দু’টি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় গতকাল আরও দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। শিল্প পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, গত তিন দিনে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৬৫০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মিরপুরে ২৩৫টি, আশুলিয়ায় ৩৫টি এবং গাজীপুরের ৩৮৬টি কারখানা রয়েছে। যদিও দাবি আদায়ে সহিংসতা কোন ভাবেই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

চলমান পোশাক শ্রমিক আন্দোলন ও বাস্তবতা বিবেচনায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি ১৪ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে  বৈঠক করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন, মালিকদের ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব অযৌক্তিক। আগামী ৭ নবেম্বর মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলে প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কাছে শ্রমিকনেতারা তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য গ্রহণযোগ্য মজুরি, মোট মজুরির ৬৫ শতাংশ মূল বেতন, বার্ষিক ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং ৭টির বদলে ৫টি গ্রেড নির্ধারণের দাবি জানান। যা যৌক্তিক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সভায় অংশ নেয়া ১৯টি শ্রমিক সংগঠনের জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) পক্ষে বলা হয়েছে, ‘যত দ্রুত সম্ভব পোশাকশ্রমিকদের জন্য যুক্তিসংগত মজুরি নির্ধারণ করা দরকার। পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য রেশন হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ প্রয়োজন। এ সব পদক্ষেপ ছাড়া গায়ের জোরে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ হবে না’। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উল্লেখযোগ্য কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সমস্যা সর্বসাম্প্রতিক নয় বরং দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিন অধিকার বঞ্চিত থাকার পর তারা এখন আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু আন্দোলন হওয়া উচিত পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। কোন ভাবেই উগ্রতা ও সহিংসতা কাম্য নয়। একই সাথে মালিকপক্ষকেও এই সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে শ্রমিকদেরও হতে হবে বাস্তবমুখী। মালিক ও শ্রমিক পক্ষ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ফর্মুলা বের করবেন-সে প্রত্যাশা দেশের আত্মসচেতন মানুষের।

 

 

https://www.dailysangram.info/post/539763