৩ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৩২

রাজনৈতিক অস্থিরতায় শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই। রাজনৈতিক অস্তিরতার মধ্যে শঙ্কিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শঙ্কায় গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়।

 আগে থেকেই মানুষের মনে রাজনৈতিক সংঘাতের যে শঙ্কা দানা বেধেছিল তা ২৮ অক্টোবর বাস্তবে রূপ নেয়। বিএনপির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত দু’জন মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।

সমাবেশের দিন সংঘাতের মধ্যেই চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীও হরতালের ডাক দেয়। এই দুই দলের হরতালের মধ্যে রোববার শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক কার্যক্রম চললেও দরপতন হয়। তবে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ে।

জানা গেছে রাজনৈতিক অস্তিরতার কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে। ডলার সংকট একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ডলারের অভাবে এলসি খোলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। এতে করে নিত্যপন্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে। আর এ কারণে হরতাল- অবরোধে কোন ধরনের পিকেটিং না থাকার পরও মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। মানুষ হরতাল অবরোধকে কল্যাণকর মনে করছে। বিনা কারণে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভালো কোন কোম্পানি শেয়ার বাজারে আসছে না। এতে করে বিনিয়োগও হচ্ছে না। প্রতি নিয়ত শেয়ারের দাম কমার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মূলধন হারাচ্ছে। এতে নতুন করে আর কেউ বিনিয়োগ করার সাহস পাচ্ছে না। ফলে পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাজারে সরকার রোডশো করছে। যা ইউরোপের ফ্রান্স সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরও একইভাবে রোডশো করেছিল সরকার। কিন্তু তেমন কোন বড় বিনিয়োগ দৃশ্যমান হয়নি। তারপরেও কেনো কোটি টাকা ব্যয় করে রোডশো করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিরা বলছেন,রাজনৈতিক অস্তিরতার মধ্যে কারো বিনিয়োগই নিরাপদ নয়। বাজার যে টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তা প্রতি দিনই কমছে। এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ করা বড় ঝুঁকি। আর এ কারণেই বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটছে না। বাজারে রাজনৈতিক অস্তিরতাও বাড়ছে।

হরতালের পর বিএনপি এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নবেম্বর অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলে। সেই দাম বাড়ার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নাম লেখানোর পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে একদিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সবকটি মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির এবং ১৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৭২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন ৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৮২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েলের ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশ, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, সমরিতা হাসপাতাল, বিচ হ্যাচারি, জেমিনি সি ফুড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৪৮টির এবং ৬৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

https://www.dailysangram.info/post/539697