৩ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৩১

বাহ্যিক চাকচিক্য ও জাতীয় অবক্ষয়

-ইবনে নূরুল হুদা

‘শৈশবেই ধর্মকর্ম না শেখালে বড় হয়ে ‘শয়তান’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বাঁশের কঞ্চি পরিপুষ্ট হলে তা ইচ্ছামত বাঁকানো যায় না; পেঁয়াজ-পান্তায় দিনের সূচনা হলে তার প্রচ্ছন্ন প্রভাবটাও থাকে দিনমানই’-এমনি ধারণায় আমার মরহুমা নানী আমাকে অতি শৈশবেই ধর্মকর্ম দীক্ষা দেয়া শুরু করেন। নিজ হাতে মুখে খাবার তুলে দিয়ে  নিজের মুখেই সজোরে উচ্চারণ করতেন ‘বিসমিল্লাহ’। নামাজের সময় হলে আমাকেও অজুর অনুশীলন করাতেন। পরম মমতায় অজুর জন্য আবশ্যকীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ধুয়ে দিতে দিতে বলতেন, ‘অজুর দোয়া জানিস ?’। আমি তার কথার মাথামুণ্ড না বুঝে তার মুখের দিকে হাঁ করে থাকিয়ে থাকতাম। 

তার মুখ থেকে অবলীলায় বেড়িয়ে আসতো, ‘হাত গোছল, পাও গোছল, গোছল মাথার চুল; আখেরে সাক্ষী থেকো মোহাম্মদ রসুল (সা.)’। লেখাপড়া না জানা মাতামহী এই কথাগুলোকেই অজুর দোয়া মনে করতেন। তার ধর্মচর্চাও ছিল খুবই সাদামাটা গোছের। কিন্তু তার আধ্যাত্মিকতার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, অনুরাগে কোন কৃত্রিমতা লক্ষ্য করা যায়নি। আসলে সেকালের মানুষের ধর্মানুরাগটা এমনই ছিল। কিন্তু হাল আমলে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন ধার্মিকের সংখ্যা বাড়লেও মৌলিকত্ব নিয়ে প্রশ্নটা বেশ প্রবল। প্রায় ক্ষেত্রেই দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, আধ্যাত্মবোধ, আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা হয়ে উঠেছে শুধুই আত্মস্বার্থ কেন্দ্রীক, লোক দেখানো, অলঙ্কারিক বা পোশাকী পরিসরে। এক শ্রেণির মানুষ দৃশ্যত যতটা সাধু-সজ্জন, তার চেয়ে অধিক কপট; সৌন্দর্যের ছদ্মাবরণে রীতিমত কদাকার-কুৎসিত।   

বস্তুত, প্রায় ক্ষেত্রেই কৃত্রিমতা ও বেশভূষার মুদ্রাদোষে দুষ্ট হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। বাস্তবতা, বস্তুনিষ্ঠতা  ও আন্তরিকতার পরিবর্তে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে লৌকিকতা। মুখে যা বলা হয় তার সাথে বিশ্বাসের সম্পর্কটা থাকে খুবই গৌণ; আর যা বিশ্বাস করা হয় তা প্রায় ক্ষেত্রেই থাকে উহ্য। মনে হয় এক অদৃশ্য অবগুন্ঠনে আমাদের মনুষত্ব, মূল্যবোধ, মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও নৈতিকতা ঢাকা পড়ছে। ফলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় খুব সুবিধা করতে পারছি না। 

মূল্যবোধহীনতা ও আত্মকেন্দ্রীকতার সাথে প্রদর্শন ইচ্ছা এজন্য সমানভাবে দায়ী। কারণ, ‘মানুষের জন্যই মানুষ’ আর ‘সৃষ্টির কল্যাণেই সৃষ্টি’ এসব কথা এখন বাজারে তাণ্ডমুদ্রার মত প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তাই ‘সবার উপরে মানুষ সত্য...’ কবির এই সনাতনী উপলব্ধির পরিবর্তে ‘সবার উপর আপনা সত্য’ আর ‘সকলি মম তরে’ স্থান করে নিয়েছে। আমরা হীরা ফেলে কাঁচের প্রতিই মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছি। সে মোহের পেছনেই ছুটছি উদভ্রান্তের মত। যা আমাদের অধঃপতনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

আজকের দিনের মানুষ যেমন ধর্মচর্চা করেন; আগের দিনেও তেমনি করতেন। কিন্তু সেকাল আর একালের আধ্যাত্মিকতায় একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতার মধ্যে বিস্তর তারতম্য দৃশ্যমান। আগের দিনে মানুষ অতি সাধারণভাবে ইবাদত-বন্দেগী-উপাসনা করেছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে উপাসনা উপকরণ, বহিরাভরণ,  পোশাকের বাহার ও উপসনালয়ের অলঙ্করণে চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু উৎকর্ষতা হারিয়েছে আধ্যাত্মিকতা ও মূল্যবোধ। ভক্তিহীন ভক্তের সংখ্যা বেড়েছে গাণিতিক হারে। এসব ভক্তকূল দৃশ্যত নিজেদের ‘তাপস’ বলে দাবি করলেও বাস্তবতায় বিড়াল তাপস;  ধার্মিকতার ছদ্মাবরণে রীতিমত বকধার্মিক। 

শুধু আমরা যে আধ্যাত্মবোধে নি¤œগামী হয়েছি এমনটা মনে করা আধ্যাত্মবাদীদের প্রতি অবিচার করা হবে। কারণ, অবক্ষয়ের জয়জয়কারটা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রেই প্রবেশ করেছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কোন কিছুই অবক্ষয়ের বাইরে নয়। আগের দিনে বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা কর্তব্য-কাজ মনে করা হতো। কিন্তু এখন সৃষ্টি হয়েছে মধ্যস্বস্ত¡ভোগী শ্রেণি। তাই সামাজিক সমস্যাগুলো আর সামাজিকভাবে সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। আত্মকেন্দ্রীকতার কারণে আমাদের পারিবারিক বন্ধনও আগের তুলনায় অনেক নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ওঠে গেছে সহানুভূতি ও মহত্ববোধ। আত্মার পূজা করতে গিয়েই ভ্রাতৃকলহ ও গৃহবিবাদ সহ নানাবিধ পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। 

কোন জাতি-রাষ্ট্রের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে সে দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বই নিয়ামক শক্তি। কিন্তু একশ্রেণির  মতলববাজ রাজনীতিকের কারণেই আমাদের দেশের রাজনীতি খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে। রাজনীতিতে গণমুখিতার পরিবর্তে গণবিরোধিতা, আত্মপূজা, শ্রেণিপূজা ও গোষ্ঠীপূজা স্থান করে নিয়েছে। নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার কোন অরাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যারা কেয়ারটেকার পদ্ধতিকে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রাণপাত করেছিলেন প্রয়োজন শেষে তারাই আবার এই পদ্ধতিকে ‘অর্ধচন্দ্র’ দিতে কুন্ঠিত হয়নি। এজন্য আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা করতে মোটেই কসুর করা হয়নি। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য যাদেরকে সঙ্গী করা হয়েছিল তারা এখন রাজনীতিতে অচ্ছুত-অপয়া হয়ে গেছেন।  তাদের ছাযা মারানো এখনো মহাপাপের কর্মে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে এমন স্বার্থান্ধতা, মূল্যবোধের বিচ্যূতি দেশ ও জাতিকে এক অন্ধকার গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই আত্মসচেতন মানুষ  রাজনীতি বিমুখ হতে শুরু করেছেন। যা আমাদের জাতিস্বত্ত্বার ভিত্তিমূলককেই দুর্বল করে দিচ্ছে।   

গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতির অভিযাত্রা হলেও আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতিকে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার মোক্ষম হাতিয়ার বানানো হয়েছে। ফলে তোতা পাখির মত দেশ-জাতির স্বার্থ, গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকারের কথা বলা হলেও এর ছদ্মাবরণে অন্য বিষয় ক্রিয়াশীল রয়েছে। এমন দাবি যে বিশেষ উদ্দেশ্যে শ্রেণি বিশেষের চরিত্রহনণের জন্য নয় রাজনীতিতে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ তা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে।

দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও তা সমাধান প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে একশ্রেণির রাজনীতিকদের ভূমিকা সেদিকেই অঙ্গুলি নিদের্শ করছে। মূলত চলমান সঙ্কটের একটি যৌক্তিক সমাধান সম্ভব হয়নি রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই। রং বদলের রাজনীতিও এজন্য কম দায়ী নয়। জাতীয় ঐক্যের বিপরীতে সরকার ও বিরোধী পক্ষ ভিন্ন মেরুতে অবস্থানের কারণেই রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনিভূতই হয়েছে। তবে দেশে মৃতপ্রায় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কিছুটা সঞ্জিবনী শক্তি দেয়ার জন্য বিরোধী দলের সাম্প্রতিক তৎপরতা জনমনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে। জাতি এর ইতিবাচক পরিণতি দেখার অপেক্ষায়।

আমাদের দেশে সুস্থধারার রাজনীতি ও গণতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি বেশ সমস্যাসঙ্কুলই বলতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো একে অপরকে দায়ী করলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়টাই বেশি। সঙ্গত কারণই বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ হচ্ছে, ‘সরকার দেশে অপশাসন-শাসন চালাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন নেই’। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ, দেশের হারানো গণতন্ত্র ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতেই একটি বৃহত্তর  ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টাদের অন্যতম ছিলেন একজন সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ, গণতন্ত্র হত্যা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি ও পাচার এবং অপশাসন-দুঃশাসনের অভিযোগ করে আসছিলেন দীর্ঘদিন থেকেই । দেশ ও জাতিকে এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই তিনি একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজও  শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে হতাশই করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিরোধী ঐক্যের অংশ হতে  না পেরে তার ভাষায় গণতন্ত্র হরণ ও জনগণের সম্পদের লুন্ঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত সরকারি জোটে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে অন্যতম অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছিলেন। অথচ পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জাতির কা-ারি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারতেন। যেমন হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতা ন্যালসন ম্যান্ডেলা। তিনি যে কত বড় মাপের নেতা ছিলেন তা তার বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার।

 ন্যালসন ম্যান্ডেলার ভাষায়, “Lead from the back-and let others believe they are in front’.অর্থাৎ ‘পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও; আর সাথে অন্যদের বিশ্বাস দাও যে আছে সম্মুখ সারিতে’। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, ১৭ কোটি মানুষের দেশে একজন ন্যালসন ম্যান্ডেলার আবির্ভাব হয়নি। তার মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরাও এই অশুভ বৃত্ত থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারেন নি বরং একেক সময় একেক কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। আর দ্বাদশ জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা হয়তো শিয়াল পন্ডিতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর দেবর-ভাবী এ খেলা ভাল ভাবেই জমে তুলেছেন। কেউ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে একেবারে কোমড় বেঁধে আছেন। আবার আরেক জন কখন কী বলেন তার কোন আগামাথা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এই শিয়াল পন্ডিতেরা কোনভাবেই কোন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। এতে মনে করা হচ্ছে যে, রাজনীতির এই ভাঁড়েরা সবসময় শ্রোতের অনুকূলেই থাকবেন।

‘রাজনীতিতে শেষ কথা নেই’ এই তথাকথিত আপ্তবাক্যটিই আমাদের রাজনীতিকে রীতিমত ডুবিয়েছে। বস্তুত আমাদের দেশের রং বদলের রাজনীতি এবং একশ্রেণির রাজনীতিকের মূল্যবোধহীনতা ও আদর্শচ্যুতিই জাতীয় জীবনের ভোগান্তির মূল কারণ। রাজনীতিতে এমন রং বদলের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, এখনও ঘটছে এবং আগামী দিনেও ঘটবে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের একশ্রেণির রাজনীতিকদের স্বরূপ যেভাবে উম্মোচিত হয়েছে তা কোন ভাবেই কাক্সিক্ষত ছিল না। বিশেষ করে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সুযোগ সন্ধানীদের দৌড়ঝাঁপ ও রং বদলের মহড়া পুরো পরিস্থিতিকে খুবই জটিল করে তুলেছে। রাজনীতি যেমন ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে একশ্রেণির রাজনীতিকও দালাল-ফরিয়া চরিত্রের কুশীলব হয়ে উঠেছেন। ফলে রাজনীতিতে সুস্থ্যধারা অধরায় থেকে যাচ্ছে। 

রাজনীতি একটি সেবামূলক কাজ হলে আমাদের দেশের ভূরাজনৈকিত প্রেক্ষাপটে তা আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি আরও সুস্পস্ট হয়ে উঠেছে সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) যৌথ প্রতিবেদন ‘দ্য রিয়েল পলিটিকস অব বাংলাদেশ : দি ইনসাইড স্টোরি অব লোকাল পাওয়ার ব্রোকারস’ এ । এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ছয় বছরের কম সময়ে সংসদ সদস্যদের আয় বেড়েছে ৩২৪ শতাংশ। বর্তমানে সংসদ সদস্যদের বার্ষিক গড় আয় প্রায় কোটি টাকা, যা একজন সাধারণ মানুষের আয়ের প্রায় শতগুণ। প্রতিবেদনে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সংসদ সদস্যদের আয় বৃদ্ধির তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় উল্লেখকৃত তথ্যের তুলনা করে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্যদের বার্ষিক গড় আয় ২৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা ছিল, ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৯৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। যা রীতিমত আতকে ওঠার মত। আমাদের দেশের রাজনীতিকরা চুন থেকে পান খসলেই কেন রং বদলের মহড়া প্রদর্শন করেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই প্রতিবেদনে। 

মূলত, নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই আমরা এখনও অনগ্রসর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ ও  জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব ছিল রাজনীতিকদেরই। কিন্তু তারা হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে জাতিকে বহুধাবিভক্ত করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ পরায়ণতার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এতে শ্রেণি বিশেষ কিছু সুবিধা পেলেও জাতীয়ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রতিশোধের অর্জন হয় খুবই সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় নেতাগ্রস্ত রাজনীতিকরা তা কোন ভাবেই উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেননি। এ বিষয়ে ন্যালসন ম্যান্ডেলার মত হলো, “You will achieve more in this world through acts of mercy than you will though acts retribution”. অর্থাৎ ‘পৃথিবীতে প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে যতটা অর্জন করতে পারবেন, তার চেয়ে ঢের বেশি অর্জন করতে পারবেন ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে’। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিকরা সে আদর্শ অনুসরণ করেননি।

মূলত আমাদের দেশে অবক্ষয় এখন প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সহ সকল পর্যায়েই এর ব্যাপ্তি ঘটেছে। আগের দিনের ধার্মিকতা ছিল যেমন আধাত্মবাদের রঙে রঙিন, ঠিক তেমনিভাবে রাজনীতিও ছিল আদর্শিক, কল্যাণকামী, গণমুখী ও মূল্যবোধভিত্তিক। কিন্তু হালে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সকল কিছুতেই বাহ্যিক চাকচিক্য বাড়লেও তা নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। রাজনীতিকে এখন অনেক চটকদার কথা মালার ফুলঝুড়ি শোনা গেলেও তা যেমন অন্তঃসারশুন্য, ঠিক তেমনিভাবে ধর্মাচারে ঠাট-বাট বাড়লেও তা নানীর দোয়ার মত আধ্যাত্মবাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নয়। মূলত এটিই এখন আমাদের জাতীয় জীবনের প্রধান সমস্যা। 

 

https://www.dailysangram.info/post/539676