২ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:০২

প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ দামে ডলার বিক্রি

ব্যাংকে নগদ ডলার সর্বোচ্চ ১১৪.৭৫ টাকা

 

ডলারের বাড়তি দর কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনেই ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। আগে নতুন দর কার্যকর হওয়ার পর এক থেকে দুই সপ্তাহ সর্বোচ্চ দরের চেয়ে কম দামে বেচাকেনা হতো। এবার প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলোতে চাহিদা বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের কারণে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে বলে জানান ব্যাংকাররা।

বুধবার একটি ব্যাংক ছাড়া বাকি সব ব্যাংকে আমদানিসহ গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা করে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। কেবলমাত্র ইউনিয়ন ব্যাংকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে বেচাকেনা হয়েছে। তবে ব্যাংকটি গ্রাহক পর্যায়ে তেমন কোনো ডলার বিক্রি করতে পারেনি বলে জানা গেছে। এছাড়া রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় সব ব্যাংকই ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে কিনেছে। কিছু ব্যাংক রেমিট্যান্স আরও বেশি দামে কিনেছে। সেগুলো ১১৪ থেকে ১১৬ টাকাও রয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের লাইসেন্সধারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। নতুন দর বুধবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার থেকে আমদানিতে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১১১ টাকা, শিক্ষার্থীদের বিদেশে ফি পাঠানো, ভ্রমণ, চিকিৎসা খাতসহ অন্যান্য খাতে প্রতি ডলারের দামও ১১১ টাকা করা হয়। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে এর দাম নির্ধারণ করা হয় ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।

আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা করা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো যাতে কিছুটা কমে ডলার বেচাকেনা করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার যাতে আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করে দেয় সে ব্যাপারেও তাদেরকে বলা হয়েছে।

এছাড়া রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বেঁধে দেওয়া প্রণোদনার হারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে যে কোনো হারে প্রণোদনা দিতে পারবে। আগে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। নতুন বিনিময় হারে প্রবাসীরা এখন রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১১৬ টাকার বেশি পাবেন। রেমিট্যান্সের ডলার কেনার দর ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে সরকারের প্রণোদনা বাবদ পাবেন আড়াই শতাংশ। ফলে প্রতি ডলারে মিলবে ১১৩ টাকা ২৬ পয়সা। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো দিতে পারবে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। ফলে প্রতি ডলারে প্রবাসীরা পাবেন ১১৬ টাকা ৯ পয়সা। তবে কোনো ব্যাংক ইচ্ছে করলে এর চেয়ে বেশি প্রণোদনা দিতে পারবে। তবে প্রণোদনার অর্থ ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে। ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় বাড়তি টাকা খরচ হলেও বিক্রি করতে হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা দামে। এ খাতে দাম বাড়ানো যাবে না।

এদিকে ডলার আগাম বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম বাড়বে। এক বছর মেয়াদে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা করে বিক্রি করতে পারবে। এর মধ্যে বিনিময় হার ১১১ টাকা। এর সঙ্গে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করতে পারবে। বর্তমানে ওই ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করলে বাড়তি আরোপ করা যাবে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ১১১ টাকার সঙ্গে ওই হার যোগ করলে প্রতি ডলারের দাম দাড়ায় ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো এক মাস থেকে যে কোনো মেয়াদে ডলার বেচাকেনা করতে পারবে।

এদিকে ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের দামও বেড়েছে। বুধবার ব্যাংকে নগদ ডলার সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা ৭৫ পয়সায় উঠেছে। এনসিসি নগদ ডলার ১১৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বিক্রি করেছে। বেসিক ব্যাংক ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে, আল আরাফাহ, ব্যাংক আল ফালাহ, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংক ১১৪ টাকা করে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অন্য ব্যাংকগুলো ১১৩ থেকে ১১৪ টাকার নিচে ডলার বিক্রি করেছে।

ব্যাংকে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলাবাজারেও ডলারের দাম বেড়েছে। বুধবার খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১২১ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/second-edition/735554