২ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:০০

রাজধানীতে আবারো গার্মেন্ট শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত

 

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করেছে গার্মেন্টশ্রমিকরা। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি পয়েন্টের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে পোশাকশ্রমিকরা। এতে মিরপুর-১, ১০, ১১ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত সবধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে ফিরে যেতে হয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে। তবে গতকাল সংঘর্ষ ছাড়াই পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। গতকাল সকাল ৯টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ওই এলাকার কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। পরে তা মিরপুর-১০, ১১ ও ১৪ নম্বরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গোটা এলাকায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা কয়েকটি গার্মেন্টের প্রধান গেটে ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে এমনিতেই সড়কে যানবাহন ছিল অনেক কম। তার ওপর শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারা একটি বাইসাইকেলও চলতে দেয়নি।

গতকাল সকাল ৮টার দিকে গার্মেন্টে কাজ করতে এসে শ্রমিকরা ভেতরে প্রবেশ করেনি। তারা রাস্তায় জড়ো হতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে কয়েক শত শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু করে। এরপরই অন্য গার্মেন্টের শ্রমিকরাও তাদের সাথে মিশে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ও ১৪ নম্বরে রাস্তা অবরোধ করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুদার শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। পরে পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। বেলা ৩টার দিকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবার পল্লবীতে গার্মেন্টশ্রমিক, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় ১৫/২০টি যানবাহন।

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের নবম দিন বুধবারেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় এদিন আন্দোলনরতদের তাণ্ডব তেমন একটা চোখে পড়েনি। এদিন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।

বুধবার গাজীপুর মহানগরের বাসন এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা বাইপাস (নাওজোর-ভুলতা) সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরতদের মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকালে স্থানীয় রুয়া ফ্যাশন নামের গার্মেন্ট কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করতে থাকে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মরত শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দিয়ে ছুটি ঘোষণা করে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করলেও তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনুল হক জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। সপ্তম দিনের মতো সোমবারও শ্রমিকরা আন্দোলন বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মেট্রো চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মো: জাহাঙ্গীর আলমের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা। বুধবার গাজীপুরের কোথাও শ্রমিকরা রাস্তায় নামেনি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে গাজীপুরের সব পোশাক কারখানা চালু ও শ্রমিকরা কাজে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর চন্দ্রা, সফিপুর, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, বাসন ও গাছা এলাকা ঘুরে এসে সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন এবং বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/788418