১ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১১:০৮

রেসিং কাণ্ডে ক্ষোভ-বিস্ময়

উদ্বোধনের পর একদিন না যেতেই ‘কঠোর নিরাপত্তা’ হাঁকডাকের প্রতি বেসামাল তরুণদের বৃদ্ধাঙ্গুলি : হলিউডি সিনেমা ‘দ্য ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’ স্টাইলে মহড়া!

 

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ভেদ করে নির্মিত সদ্য উদ্বোধন হওয়া বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতরেই ভয়ঙ্কর হলিউডি সিনেমার স্টাইলে মধ্যরাতে কার রেসিংয়ের উম্মাত্তাল নেশায় মেতে উঠে একদল বেপরোয়া তরুণ। ওরা টানেলের প্রবেশমুখে অবিরাম গাড়ি ঘুরিয়ে ও ধোঁয়া ছড়িয়ে সর্বনাশা ড্রিপটিং খেলায়ও মেতে উঠে। এমনকি উম্মাত্তাল তরুণরা ‘দ্য স্লো কিডস’ নামে একটি পেজ খুলে টানেলে তাদর রেসিং কাণ্ডের ভিডিও শেয়ার দেয়। হলিউড সিনেমা ‘দ্য ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’র সঙ্গে তুলনাও করে। যেন হরর হলিউডি সিনেমার এদেশীয় মহড়া! গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন। এর একদিন যেতে না যেতেই ১২ থেকে ১৫টি নামিদামি গাড়িবহর নিয়ে তরুণরা ভয়ঙ্কর রেসিং নেশায় মেতে উঠে টানেলের ঠিক ভেতরেই।

এর বেশকিছু ভিডিও চিত্র ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় সবখানে ক্ষোভ-বিস্ময়ের সাথে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। কারা এসব বেপরোয়া তরুণ? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগের ঘোষণা অনুযায়ী টানেলের সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা রোধে ‘কঠোর ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার এতোসব হাঁকডাক গেল কোথায়? কীভাবে একদল তরুণ বেসামাল হয়ে টানেলের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারলো? এসব প্রশ্ন চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারাদেশে সচেতন মানুষের মুখে মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে।
কেননা ভয়ঙ্কর রেসিং খেলায় মেতে উঠা বেসামাল এসব তরুণ টানেলে মারাত্মক দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকি তৈরি করে। দেশের প্রথম ও দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে সর্ববৃহৎ এই টানেলের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কার্যত ঠুনকো এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো গুটিকয়েক উম্মত্ত তরুণ। অথচ আইনের আওতায় আসেনি এখনও কেউই।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা হবে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। টানেলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
যেভাবে ভয়ঙ্কর কার রেস হলো : গত শনিবার উদ্বোধনের পরদিন রোববার ভোরবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু টানেল সর্বসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। সারাদিন স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল ছিল। কিন্তু মধ্যরাতে ঝটিকা বেগে একদল তরুণ বেসামাল এই কার রেসিং খেলায় মেতে উঠে। এ সময় একযোগে কারসহ গাড়িবহরের বিকট আওয়াজের সাথে তারা উল্লাসে ফেটে পড়ে। উঠতি বয়সী ছেলেরা নামিদামি স্পোর্টস কার নিয়ে বিপজ্জনক গতিতে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে।

মোটর রেসের ভয়ানক স্টাইলের বেশ কয়েকটি ভিডিও গত সোমবার ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। বেপরোয়া তরুণরা ‘দ্য সেøা কিডস’ নামে একটি পেজে টানেলে রেসিংয়ের ভিডিও আপলোড করে। রেসে প্রায় বারো থেকে পনেরোটি গাড়ি অংশ নেয়। টানেলের ভেতরেই গাড়িগুলো চলেছে বেপরোয়া গতিতে।

অথচ ঝুঁকি বিবেচনায় টানেলে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। তরুণরা দ্বিগুণ গতিবেগে গাড়িবহর ছুটিয়ে চলে।

রেসিংয়ের ভিডিও করা হয় রোববার দিবাগত মধ্যরাতে। বেসামাল তরুণরা রেসিং ভিডিও শেয়ার দিয়ে হলিউড সিনেমা ‘দ্য ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’এর সঙ্গেও তারা তাদের এই কাণ্ডের তুলনা করে।

এদিকে রেসের আগে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের মুখেই গাড়িবহর অনবরত ড্রিপটিং করে প্রতিযোগিতার মহড়া চালায় তরুণরা। তখন উৎসুক জনতা ভিড় করে। এ গাড়িগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছিল নাম্বার প্লেটবিহীন। আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যরা ছিলেন বলতে গেলে নীরব দর্শক!

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতরেই বেসামাল তরুণদের এভাবে রেসিংয়ের নেশায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ভয়ানক দৃশ্যের ভিডিও এবং ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা চলছে। সর্বসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়ার পর প্রথম দিনেই বেপরোয়া রেসিংয়ের ঘটনা ঘটল। অবশ্য এ ঘটনার পর টানেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিসীমায় গাড়ি চলাচল, টানেলের ভেতরে ছবি না তোলা ও ওভারটেক না করাসহ ১৪টি নির্দেশনা দিয়ে আগেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। অথচ বেসামাল তরুণরা রেসিং খেলায় মেতে উঠে এসব নিয়ম ও নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার পেয়ে যায় কীভাবে এ নিয়ে সর্বমহলে চলছে সমালোচনা ও অসন্তোষ।

নিয়ম ভঙ্গ করে টানেলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন নাগরিকগণ। তারা এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও পুনরাবৃত্তি বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

https://dailyinqilab.com/national/article/613845