১ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১১:০৩

বেসামাল বাজার চাপা কান্না

 

সাধারণ মানুষের খাবারের অবিচ্ছেদ্য পণ্যটি আলু। সস্তা হওয়ায় সব ধরনের রান্নায় আলুর ব্যবহার করা হতো। তবে সেই আলুতেও পড়েছে সিন্ডিকেটের থাবা। সস্তার আলু এখন বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। নিয়মিতই হু হু করে বাড়ছে দাম। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তাই আমদানি করা হবে আলু। আরেক মসলা জাতীয় সবজি পিয়াজ আমদানি করেও মূল্যবৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেঞ্চুরি পেরিয়ে এখন পিয়াজের দাম হয়েছে ১৩০ টাকা। পাড়া- মহল্লার দোকানে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ।

শুধু কি আলু আর পিয়াজ। দাম বাড়ছে নানা পণ্যের। মাছ, মাংস ও সবজি কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে মানুষ। 

বেসামাল বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মাঝে চাপা কান্না। পিয়াজ ও আলুর দামে লাগাম টানতে দেড় মাস আগে মূল্য বেঁধে দিয়েছিল সরকার। সরকার নির্ধারিত দেশি পিয়াজের দর ঠিক করা হয়েছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ সেই দরের ধারেকাছেও নেই পিয়াজ। বর্তমান খুচরা বাজারে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। অবশ্য দু-তিন দিন আগেও ১০০ টাকা কেনা যেতো এক কেজি পিয়াজ। দেড় মাস আগে আলুর দামও নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে। তবে এখন প্রায় তার দ্বিগুণ হয়েছে দাম। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। আড়তদারদের বরাত দিয়ে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আলু ও পিয়াজের দাম আরও বাড়ানো হতে পারে। ভারতে পিয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই দেশেও বেড়েছে। আর আলুর দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে সংকটের কথা বলছেন।

দেশে আলুর উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক দামে বাজারে বিক্রয় হওয়ায় আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় না হওয়া এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে আলু সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। আলুর কেজি কোনো ভাবেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না বলে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।  

এদিকে ভারত সরকার তাদের দেশে পিয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা গত সোমবার থেকে কার্যকর করা হয়। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত শনিবার জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন পিয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি টন পিয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানি মূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। ফলে দেশের ভেতরে কোনো কোনো বাজারে পিয়াজের দাম কেজিতে ৮০ রুপি পর্যন্ত উঠে গেছে। এ অবস্থায় ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি করতে গেলে বাড়তি দামে কিনতে হবে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়িয়েছেন।

বাজারে সবজির দামও স্বস্তি দিচ্ছে না। সব ধরনের সবজির দামই চড়া। সেঞ্চুরি পেরিয়ে এখন প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা-ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ও পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। খুচরায় এখন সরু চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়। মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। আর আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল, তেল, আদা-রসুন। গরু- খাসির মাংসের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। মুরগি আর ডিমের দামও উঠানামা করছে নিয়মিত।

https://mzamin.com/news.php?news=81297