১ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:৫৪

নীতিমালা শিথিলের সুযোগে বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদহার

 

ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। আর এ সুবাদে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার আরেক দফা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। নীতিমালা অনুযায়ী এ সুদের সাথে ব্যাংকগুলো তিন শতাংশ সুদ যুক্ত করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। আর এভাবে ব্যাংকঋণের সুদহার আরেক দফা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো ব্যাংকারদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে ব্যাংকঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা ছিল। আর এ সীমা ছিল ৯ শতাংশ। এটা করা হয়েছিল ২০২০ সালে। কিন্তু আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে সরকার সুদহার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয় গত জুন মাসে। তখন এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার হবে ঋণের সুদহারের ভিত্তি। আর এ ফর্মুলা ব্যাংকারদের কাছে স্মার্ট (সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) নামে পরিচিত। কিন্তু জুন থেকে শুরু হওয়া এ গড় সুদহার বেড়েই চলছে। গত আগস্টে এ হার ছিল ৭ দশমিক ১৪, সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২০ এবং গত মাসে এ হার বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। নীতিমালা অনুযায়ী এ হারের সাথে তিন শতাংশ যুক্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। আর এটা করা হলে চলতি নভেম্বরে তা বেড়ে হবে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক মাসে বাড়বে শূন্য দশমিক ২৩ বেসিস পয়েন্ট। যদিও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে এ হার আরো ১ শতাংশ বাড়বে। তবে, এক শতাংশ কমবে কৃষি ও পল্লী ঋণ এবং রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে উদ্যোক্তারা চাহিদা মতো পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এক বছর আগেও যেখানে প্রতি ডলার পাওয়া যেত ৯০ টাকায়, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৮ টাকা। তবে আমদানি পর্যায়ে ব্যাংকভেদে তা আরো বেশি। এতে বেড়েছে ব্যবসা ব্যয়। প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বেড়েছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীদের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখনই সুদহার বাড়ছে। এতে সব ধরনের ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যাবে।

একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এমন একটি সময়ে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ছে, যখন প্রত্যেক ব্যবসায়ী টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করছেন। একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখন আর মুনাফার হিসেব করছি না, আমরা কিভাবে টিকে থাকব তার হিসেব করছি। এমনি পরিস্থিতিতে সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায়ী ব্যয় আরো এক দফা বাড়বে। আর এতে মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি মুদ্রানীতিতে টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ জন্য ইতোমধ্যে কয়েক দফা নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ৯ শতাংশ সুদে ধার নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যদিও এ কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে কম পরিমাণ ঋণ নেবে। আর টাকার প্রবাহ কমে গেলে মূল্যস্ফীতি আপনাআপনিই কমে যবে। তবে, বাস্তবতা হালো আমাদের দেশের মতো অর্থনীতিতে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি খাটে না। কারণ, মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এখন মানুষের হাতে বাড়তি অর্থ দিলে ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাবে। আর এ কারণেই টাকার প্রবাহ না কমিয়ে বরং টাকার মান শক্তিশালী করতে বিকল্প উপায় বের করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। তবেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/788226